৪ কিলোমিটার হেঁটে দুর্গম চরে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন মা

সুমা আক্তার ও নাহিদ হোসেন দম্পতি। ঢাকা থেকে যাবেন বরিশালে। করোনার কারণে দূরপাল্লার যান বন্ধ থাকায় যান শিমুলিয়া ঘাটে। ফেরি বন্ধ থাকায় ভাড়া করেন একটি ট্রলার। কিন্তু ট্রলারটি নির্দিষ্ট জায়গায় না গিয়ে নামিয়ে দেয় ঘাট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া গ্রামে। উপায় না পেয়ে তারা হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যে। পথিমধ্যে সুমার প্রসববেদনা উঠলে চরে স্থানীয় নারীদের সহযোগিতায় এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
পরে তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শিশু ও মা দুজনই এখন সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান।
সুমা আক্তার ও নাহিদ হোসেন দম্পতি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা ঢাকার লালবাগ এলাকায় থাকেন। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফেরি বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাটের পাশ থেকে মাঝির ঘাট আসার জন্য একটি ট্রলার ভাড়া করেন নাহিদ। সেই ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে মাঝিরঘাট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব নাওডোবার ওবায়েদ মাঝিকান্দি এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে হাঁটতে থাকেন তারা। কিন্তু মাঝির ঘাট আসার আগেই পাইনপাড়া এলাকায় মেয়ে শিশুর জন্ম দেন সুমা। পরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী ও স্থানীয়রা মা ও শিশুকে জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নাহিদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। তখন চিকিৎসক জানান, আগামী মাসে (জুন) সন্তান জন্ম হবে। তাই স্ত্রীকে দেশের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ফেরি বন্ধ থাকায় আমরা ট্রলারে পার হচ্ছিলাম। আমাদের চরের মাঝে নামিয়ে দিয়ে বলা হয় এক কিলোমিটার দূরেই মাঝির ঘাট। কিন্তু সেখানে আসার আগেই প্রসববেদনা উঠে সুমার। তখন এলাকার নারীরা দেখে এগিয়ে আসেন। বিকেলে কন্যাসন্তান হয় আমাদের।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী রিনা বেগম বলেন, আমি স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পাই পাইনপাড়া এলাকায় প্রসববেদনায় ছটফট করছেন এক নারী। আমি দ্রুত সেখানে যাই। যাওয়ার আগেই সেখানে একটি ফুটফুটে মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। মা ও শিশু দুইজনই ভালো আছে।
জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলার পাইনপাড়া এলাকায় এক নারী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তাকে আমাদের ইউনিয়ন সহকারীর সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাদের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মা ও শিশু দুইজনই ভালো আছে। উপজেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি