স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ চারজনের যাবজ্জীবন
মুন্সীগঞ্জে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী রেশমা বেগমসহ চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদেরকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন ঊর্মি এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার পাঁচ ঘরিয়াকান্দি গ্রামের হোসেন সরকারের মেয়ে ও নিহত মোশারফ হোসেনের স্ত্রী রেশমা বেগম, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজিমিজি চৌধুরীপাড়ার মৃত মনুমিয়ার ছেলে মো. ফারুক মিয়া, ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে মো. বেলায়েত হোসেন ও কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বন্ধনপুর এলাকার বদুরুজ্জামানের ছেলে নাসির উদ্দিন মিঠু। আসামিরা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসে ব্যবসা করতেন। মাঝে মাঝে দেশে আসেতেন। ২০১০ সালের ৯ আগস্ট মোশারফ বাংলাদেশে আসেন। ১০ আগস্ট তিনি মুন্সীগঞ্জের সদরের পাঁচঘরিয়াকান্দি তার শ্বশুর বাড়িতে আসেন। কাজ শেষ করে বিকেল ৬টার দিকে মোশারফ ঢাকার উদ্দেশ্যে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের লিচুতলা বাসস্ট্যান্ড সীমান্ত পরিবহনের কাউন্টারের সামনে আসলে অজ্ঞাতনামা চারজন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল যোগে এসে মোশারফ হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক পুলিশ এসে মোশারফকে চিকিৎসার জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোশারফকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে , মোশারফের দুই সন্তান রয়েছে। তিনি গ্রিসে থাকা অবস্থায় রেশমা বেগম আসামি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন। রেশমা ও বেলায়েত ভাড়াটিয়া খুনিদের মাধ্যমে মোশারফ হোসেনকে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় মোশারফের মা হাজেরা বেগম বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এ সময় আসামি বেলায়েত ও ফারুক মিয়া হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দীর্ঘ ১৪ বছর মামলা চলাকালে ২৫ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দির ভিত্তিতে আদালত চার আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম পল্টু জানান, ২০১০ সালের ১০ আগস্ট ভিকটিম মোশারফ হোসেনকে চারজন মিলে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে। আসামি বেলায়েত ও ফারুক মিয়া হত্যার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
ব.ম শামীম/আরএআর