সাহায্যের পাতা জালে নবজাতক চুরি

জন্মগতভাবে নবজাতক সন্তানের ওজন কম। এ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন মা মনি খাতুন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সন্তান চুরি করেছেন নাম পরিচয় অজানা এক নারী। শুধু তাই নয়, স্বেচ্ছাসেবী পরিচয় দেওয়া ওই নারী বিশ্বাস অর্জনে নবজাতকের স্বজনের হাতে চিকিৎসার খরচ বাবদ দিয়েছেন ৫ হাজার টাকা। এখন সন্তান হারিয়ে কান্না থামছে না নবজাতকের মা মনি খাতুনের।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় নানী রুমি বেগমের থেকে নবজাতককে কোলে নেন প্রতারক ওই নারী। এরপর কোনোভাবে নবজাতককে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি। এ ঘটনার নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি নবজাতকের।
জানা গেছে, নবজাতকের বাবার নাম সুমন মিয়া। তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বাসিন্দা। সন্তান প্রসবের সুবাদে সুমনের স্ত্রী মনি খাতুন বাবার বাড়ি পাবনা জেলা ঈশ্বরদী উপজেলার গোকুলনগর গ্রামে আসেন। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হলে গত ৭ অক্টোবর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নবজাতকের জন্ম দেন মনি খাতুন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির স্বাভাবিক জন্ম হয়। তবে জন্মগত ওজন কম ছিল শিশুটির। তাই নবজাতককে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মা। বুধবার অজ্ঞাত এক নারী মাস্ক পরা অবস্থায় নবজাতকটির ভালো-মন্দ বিষয়ে খোঁজ নেন। এসময় মনি খাতুন ওই নারীকে সমস্যার কথা জানান। তখন ওই নারী বাইরের একটি ক্লিনিকে শিশুর চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। একইসঙ্গে নবজাতকের নানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
নবজাতকের মা মনি খাতুন জানান, ওই নারী তার মাকে বলেন যে তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বাচ্চাদের চিকিৎসা ও টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তার মা রুমি বেগম বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বাইরে গিয়ে অজ্ঞাত ওই নারীর কোলে তুলে দেন। এরপর থেকে আর বাচ্চার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, নবজাতক চুরি হয়নি, নানীর থেকে হারিয়েছে। নবজাতকের নানী প্রলুব্ধ হয়ে শিশুটিকে এক নারীকে দিয়েছে। এ বিষয়ে রাজপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ দেখছে।
রাজপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিশুকে পাওয়া যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে নবজাতকের স্বজনদের ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন ওই নারী। প্রতারক ওই নারী চিকিৎসার খরচের কথা বলে এই টাকা দিয়ে নবজাতকের মা ও নানীর বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নবজাতককে উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
শাহিনুল আশিক/এসএসএইচ