৩০ বছর ধরে অন্যের ঘর সাজান সরকার

হাতুড়ি, বাটল, ছেনি আর ডাইস ছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট ধারালো অস্ত্র। এসব দিয়েই শক্ত কাঠ খোদাই করে তৈরি করেন আধুনিক সব ডিজাইনের আসবাবপত্র। শুধু তাই নয়, খাটের অব্যবহার্য কাঠ দিয়ে তৈরি করেন ফুলদানি, অ্যাশট্রেসহ নানা ধরনের খেলনা। কাঠ খোদাই আর নিপুণ আসবাবপত্র তৈরি করে ৩০ বছর ধরে অন্যের ঘর সাজিয়ে চলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নিত্যানন্দনপুর গ্রামের উমেদ সরকার।
কাঠমিস্ত্রি উমেদ সরকার বলেন, বাল্যকাল থেকেই এ কাজে জড়িয়ে গেছি। বাবা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি হওয়ায় মাঝে মাঝে তার কাজে সাহায্য করতে হতো। যেতে হতো কুষ্টিয়ার পোড়াদহসহ বিভিন্ন এলাকায়। এরই মাঝে বেশ কয়েকটি কাজ রপ্ত করে ফেলি। কিশোর বয়সে গোপালগঞ্জের ওস্তাদ আব্দুস সামাদের কাছে কাজে মনোনিবেশ করি। ক্যাটালগ ও ডিজাইন বই দেখে মনের মাঝে এঁকে তা কাঠের ওপর খোদাই করি।
তিনি জানান, প্রতিটি কাজের নকশাভেদে মজুরি আলাদা। একটি খাটের নকশার মজুরি দেড় হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, খাটের পায়ার মজুরি প্রতিটি ২৫ টাকা, ডাইনিং টেবিলের পায়ার মজুরি ১২৫ টাকা করে। এভাবে স্বল্প মূল্যে তার হাতের কাজ বিক্রি হয়ে যায় মহাজনের কাছে। কঠোর পরিশ্রম করলেও হাতে গোনা কয়েকশ টাকা আসে তার পকেটে। এ দিয়েই চলে তার সংসার।
জীবন-জীবিকায় এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেয়েকে মানুষের মতো করে গড়ে তোলার। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে পরিবারের পাশাপাশি দেশ ও জাতি গঠনে অংশ নেওয়ার। তার এ আশা পূরণ হয়েছে। একমাত্র মেয়ে উর্মি সরকার এমএ শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।
উমেদ সরকার জানান, বয়সের ভারে আগের মতো আর কাজ করতে পারেন না তিনি। উন্নত প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা পেলে কাঠশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। তানাহলে একদিন শিল্পীর অভাবে এ শিল্পের বিলুপ্তি ঘটবে।
শুধু উমেদ সরকার নয়, তার মতো গ্রাম বাংলায় রয়েছে অনেক কাঠমিস্ত্রি যাদের হাতের কল্যাণে শোভা পায় অভিজাত আসবাবপত্র। অথচ তাদের দূরাবস্থার কেউ খেয়াল রাখে না।
অভাবে মুখ মলিন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কাঠমিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম ও ভাটপাড়া গ্রামের সামিরুল ইসলামের। তারা জানান, যান্ত্রিকতা আমাদের কদর কাড়লেও হাতের কাজ ও যন্ত্রের কাজের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। বর্তমানে এ কাজে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোন মতে দিন চলে।
মোহাম্মদ মিলন/এসপি