চলনবিলের ফসল চাষ পদ্ধতি ঘটাতে পারে নতুন কৃষি বিপ্লব

দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল বছরের প্রায় চার মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। বর্ষায় চলনবিলের মাছ শিকার এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। আর পানি কিছুটা নামলেই কৃষকরা তাদের জমিতে আবাদ করেন আমন ধান। পরে এই জমিতে কাদার মধ্যেই বপন করা হয় রসুন এবং পেঁয়াজের বীজ। কোথাও আবার করা হয় সরিষা কিংবা ভুট্টার আবাদ। এরপর রসুন, পেঁয়াজ, ভুট্টা বা সরিষার জমিতেই ডিসেম্বর মাসে লাগানো হয় তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া বা বাঙ্গির মতো ফসল। এতে অল্প সময়েই কৃষকরা যেমন লাভবান হয় তেমনি একসময়ের অনাবাদি এসব পতিত জমি ভরে ওঠে ফসলে ফসলে।
এই অঞ্চলের কৃষি বৈচিত্র্য ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পেতে সিলেটের কৃষি বিভাগ ৩০ জন কৃষক আর ১৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে শনিবার সরেজমিনে আসেন চলনবিল অঞ্চলে। এ সময় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলনবিলে এসে সিলেটের কৃষকরা এমন ফসল চাষ পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ হন এবং তাদের জমিতে ছড়িয়ে দেওয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ নেন চলনবিলের কৃষকদের কাছ থেকে। হাওরের কৃষকরা নিজ হাতে রসুন রোপণ করেন চলনবিলের মাটিতে। তাদের আশা সিলেটের জমিতে এমন ফসল ফলানো গেলে ঘটবে আর একটা কৃষি বিপ্লব। ফলে কৃষক এবং দেশ উভয়ই লাভবান হবে।
সিলেট থেকে উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণে আসা কৃষক সাইফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষি বলতে আমরা শুধু ধানের আবাদকেই বুঝতাম। কিন্তু চলনবিল অঞ্চলে এসে দেখলাম কীভাবে একই জমিতে অনেক ফসল করা যায়। যাকে বলে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার। এখানকার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা ফসলগুলোর চাষ সম্পর্কে জানিয়েছেন। এতে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, একইভাবে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এসব ফসলের চাষ করা সম্ভব। আমি বিভিন্ন ফসলের বীজ নিয়েছি। এ সময় সিলেটে আমার যে জমিগুলো পতিত থাকতো সেগুলোতে আমি চলনবিলের কৃষকদের মতো চাষ করব। আশা করি সফল হবো।

জিতেন্দ্র দাস জিতু নামে আরেক কৃষক বলেন, সিলেটে আমাদের হাকালুকি হাওরে একটি ফসল ধান হয়। ধানের পরে এই সময়টাতে পতিত পড়ে থাকে। চলনবিল এসে দেখছি এখানে এই সময় রসুনের আবাদ করা হচ্ছে। তাও আবার বিনা চাষে। কৃষি কর্মকর্তাদের আমাদের বললেও আমরা বিশ্বাস করতাম না, সরেজমিনে এসে সত্যিই তাই দেখলাম। হাকালুকি হাওরে হাজার হাজার বিঘা জমি পতিত থাকে, চলনবিলের মতো করে যদি সেখানেও এভাবে চাষ করা যায়, কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটবে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা তাদের আবাদযোগ্য জমিতে শুধু একটি ফসল (ধান) উৎপাদন করেন। সেখানকার মাটি খুবই উর্বর কিন্তু কৃষকরা ফসল করেন না। সে কারণে তাদের উদ্বুদ্ধ করে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই কৃষি বিভাগের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে চলনবিলের চাষ পদ্ধতিতে হাওরে চাষ করছেন কৃষকরা। এটা আরও ছড়িয়ে দিতেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে এই সফরের আয়োজন।
গোলাম রাব্বানী/এমজেইউ