৭ দিনও টিকল না ৪৮ লাখ টাকার কাজ

হবিগঞ্জে ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে সড়ক মেরামত করা হলেও সাত দিনও টিকেনি। কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই ভেঙে গেছে সড়কের অনেক স্থান।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার চলিতাতলা থেকে বক্তারপুর পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তা মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে গত বছর। কাজের দরপত্র পায় মিজানুর রহমান নামে এক ঠিকাদার। তিনি কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা।
গত ১৩ মে রাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে। কাজ শেষ করার দুই দিন পর থেকেই সড়কের অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে পিচ উঠে গেছে, আবার অনেক স্থান ভেঙে গেছে। স্থানীয় লোকজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে রাস্তার অনিয়মের বিয়ষটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, রাস্তার অনেক স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে পাথর উঠে যাচ্ছে। আবার অনেক স্থানে গর্ত ভরাট করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাতের আঁধারে ঠিকাদার রাস্তার কাজ করেছে। কাজ করার দুই দিনের মাথায় রাস্তার অনেক স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে পিচ উঠে যাচ্ছে। স্থানীয় জনতা প্রতিবাদ করলেও কোন কর্ণপাত করা হয়নি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, এই রাস্তায় নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করা হয়েছে। বর্তমানের চেয়ে আগের রাস্তা অনেক ভাল ছিল। তিনি রাস্তার কাজ পুনরায় করার দাবি জানান।
গোসাই বাজার এলাকার বাসিন্দা নূর মিয়া জানান, রাস্তায় কাজ করার সময় এলাকাবাসী বার বার স্থানীয় প্রকৌলশীকে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করেন। সে সময় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। রাস্তায় পুরাতন ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে যে কারণে প্রথম বৃষ্টিতেই রাস্তার পাথর ও পিচ উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী জুবায়ের আহমেদ জানান, ঈদের আগের দিন তড়িঘড়ি করে রাস্তার কাজ করা হয়েছে। খুবই নিম্নমানের ইট, পাথর দিয়ে কাজ করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
বাহুবল উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আলফাজ উদ্দিন জানান, রাস্তায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। তবে তড়িঘড়ি করে কাজ করার কারণে চলমান কাজে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি, গর্ত সৃষ্টি হওয়া স্থানে পুনরায় মেরামত করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন কাজ করার সময় কোন ধরনের বাধা দেয়নি কিংবা আমি মামলা করার হুমকিও দিইনি।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদার জানান, এলাকাবাসীর একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। আমি বিগত সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপন করে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করেছি। সিডিউল অনুযায়ী যেটুকু কাজ করার কথা সেইটুকু কাজ আবার করা হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ স্থানে আবার কাজ করে দেওয়া হবে।
মোহাম্মদ নূর উদ্দিন/এসপি