কুয়াশার খামে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শীতের আগমন
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা এই দেশে প্রত্যেকটি ঋতু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। হেমন্তের বিদায়ের পর শীত তার আগমনি দিয়ে যায় শির শির অনুভূতি জাগিয়ে। দিন যত যায় আস্তে আস্তে তার পূর্ণতা পায়। এখন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। কুয়াশার খামে নিজের পুরো সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে শীতের সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ একর ভূমি।
নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরও কিছু মুগ্ধতা ও অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এই ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও পরিবেশ অনেকটাই গ্রামীণ আবহে তৈরি। নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয়ে আছে ক্যাম্পাস। কুয়াশায় মোড়া অল্প আলো ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে করে তোলে আরও রহস্যময়, আরও মোহনীয়। গাছের পাতায় ও ঘাসের ডগায় জমে আছে শিশির বিন্দু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের ফাঁক গলে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর সূর্যের শীতল উত্তাপহীন কিরণ এসে পড়ে। এদিকে শীতকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে লোগো ও নাম সংবলিত হুডি বানানোর ধুম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। কুয়াশার কারণে নোবিপ্রবির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যাচ্ছে না। এক ভবন থেকে অন্য ভবনের দেখা মিলছে না। যেন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।
এদিকে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। শীতের আগে থেকেই তারা আসতে শুরু করেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হচ্ছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
শীতের সকালে ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে কথা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শীতের সকাল উপভোগ করতে এসে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সীমা দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালীতে শীত শুরু হয়েছে। ভোরের কুয়াশায় আমাদের ক্যাম্পাস ঢেকে থাকে। এটা দেখতে ভালো লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অনেক বিল রয়েছে। সেখানে রং-বেরঙের শাপলা রয়েছে। আমরা শাপলা তুলি, ফুল কুড়াই। এতে করে আমাদের মনটা সতেজ হয়ে যায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস রিয়া নামের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের সকালে আমাদের ক্যাম্পাসের সব কিছু অনেক সুন্দর হয়ে উঠে। অতিথি পাখির কিচিরমিচির, শাপলার বিল আমাদের মনকে সতেজ করে। শীতের সকালে আমাদের লাল বাস, নীল বাস দেখার একটা আলাদা মজা আছে। সকালে যারা জাগে না, তারা কখনো এটা উপলব্ধি করতে পারবে না।
মহিউদ্দিন মোহন নামের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোবিপ্রবির ১০১ একর ক্যাম্পাস হলো সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সকালের কুয়াশা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতের সকালে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে আমরা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াই। আমাদের অনেক ভালো লাগে। বিল থেকে শাপলা তুলি এবং তা একজন অন্যজনকে দিই, ছবি তুলি। এতে করে সকালটা দেখতে যেমন ভালো লাগে, পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাদের আনন্দ দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশির আর কুয়াশা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক ভালো লাগে দেখতে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। আমরা পরিবহন শাখার লোকজন ভোরের আগেই উঠতে হয়৷ কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। তবে কুয়াশার মধ্যে গাড়ি চালাতে গেলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেক সাবধানে চলাচল করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘন কুয়াশা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। কুয়াশার মধ্যে শীতের পাখি এসেছে নোবিপ্রবিতে। আমি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হই। ভোরের প্রকৃতি দেখতে অনেক ভালো লাগে। তবে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী রাতভর মুঠোফোন চালিয়ে ভোর রাতে ঘুমায় এতে করে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। আমি বলবো, তারা যেন ভোরে ওঠে দিনটা শুরু করে। তাহলে সময়টা ভালো যাবে, মানসিক প্রশান্তি আসবে।
হাসিব আল আমিন/এএমকে