ছাত্রলীগ নেতার কথায় স্বামীকে তালাক দিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মারুফ হোসাইনের (৩০) কথায় স্বামীকে তালাক দিয়েছেন মাদারীপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক নেত্রী। বৃহস্পতিবার (২০ মে) মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মারুফের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর করা মামলায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন মারুফের সঙ্গে বিবাহিত ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে ঢেকে নেন মারুফ। বাড়িতে যাওয়ার পর বিয়ে না করে তিনি সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেন। এ সময় তাকে নির্যাতনও করা হয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী।
মামলার তথ্য মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ছাত্রলীগ নেত্রী ও মারুফের পরিচয় হয়। এক বছর আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন যেতে না যেতে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিয়ের প্রলোভনসহ নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন মারুফ। এমনকি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মারুফ দিনের পর দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেত্রী বিয়ের চাপ দিলে মারুফ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। একপর্যায়ে মারুফ তার কাছে বিয়ের শর্ত হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। সম্পূর্ণ টাকা দিতে ব্যর্থ হলেও মারুফ বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
সর্বশেষ গত শনিবার (১৬ মে) সকাল ৭টার দিকে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিয়ে করবে বলে নিজ গ্রামের বাড়িতে ঢেকে নেয় মারুফ। সেখানে যাওয়ার পর তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়। বিষয়টি না মানলে মারুফ, তার ভাই আরিফ হাওলাদার (২৭) ও তার মা মেহেরুন্নেছা (৫৫) তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন।
মামলার তথ্য মতে, মারুফ ও তার ভাই ছাত্রলীগ নেত্রীকে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালান। হত্যার পর তারা তার মরদেহ পানির ট্যাংকিতে গুম করার পরিকল্পনা করেন। ওই ছাত্রলীগ নেত্রী তখন তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চান। তিনি যাতে কোনো আইনের আশ্রয় না নিতে পারেন এ মর্মে তাদের কাছে ভিডিও বক্তব্য দিতে বলেন এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করতে বলে মারুফ। তিনি জীবন বাঁচাতে ভিডিও বক্তব্য দেন এবং স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করেন। এ সময় তারা তার সঙ্গে থাকা ২০ হাজার টাকা, গলার চেইন, কানের দুল, আংটি ও মোবাইল ফোন রেখে দেন।
এই ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মারুফ, তার ভাই এবং মাকে আসামি করে মামলা করেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। মামলা নং ৩৩/২৬০।
মারুফের হোসাইন পেয়ারপুর ইউনিয়নের পূর্বপেয়ারপুর কুমারেরট্যাক ৮নং এলাকার মৃত কাদের হাওলাদারের ছেলে। ছাত্রলীগ নেত্রী ৫ বছরের একটি পুত্র সন্তানের জননী।
ওই ছাত্রলীগ নেত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারুফ আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছে, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়েছে। যার কারণে আমি আমার স্বামীকে তালাক দেই। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার বাসায় নিয়ে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমি এর বিচার চাই এবং আমি আমার অধিকার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মারুফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ওই ছাত্রলীগ নেত্রী এর আগে অনেক ছেলের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। স্বামী থাকার পরেও সে বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে পরকীয়া করে। এজন্য তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।
নাজমুল মোড়ল/এমএইচএস/আরএআর