১৩৩ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো মিনহাজুলের মরদেহ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউ চলাকালে গাজীপুরে গুলিতে নিহত গার্মেন্টসশ্রমিক মিনহাজুল হোসেনের (১৭) মরদেহ ১৩৩ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রামশালা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ-আল-মাহবুব, জয়পুরহাট জেলা কারাগারের চিকিৎসক মো. শাহ আলম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুরের গাছা থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) সুমন খান, আক্কেলপুর থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) রাকিবুল ইসলাম, নিহত মিনহাজুলের মামা মিলন শেখসহ অন্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ উত্তোলনের সময় স্বজন ও গ্রামবাসীর হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রামশালা গ্রামের বাসিন্দা নিহত মিনহাজুল ইসলামের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক মালয়েশিয়া প্রবাসী। তার মা মেরিনা বিবি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিহত মিনহাজুল ইসলাম মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তিনি গাজীপুরের বড়বাড়ি জয়বাংলা এলাকার নিউ কমান্স নামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই সকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে কারফিউ চলাকালে ভাড়া বাসা থেকে মিনহাজুল বের হন। ওইদিন দুপুরে বড়বাড়ি এলাকার জয়বাংলা সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মিনহাজুল ইসলাম মারা যান। ওইদিনই গভীর রাতে মিনহাজুলের খালু শাহ পরান একটি পিকআপ ভ্যানে করে মিনহাজুলের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরদিন ২১ জুলাই সকাল ১০টায় রামশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে মিনহাজের মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিহত মিনহাজুলের চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরের একটি আদালত মিনহাজুলের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আজ রোববার দুপুরে নিহত মিনহাজুলের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।
নিহত মিনহাজের খালু শাহ পরান সাংবাদিকদের বলেন, মিনহাজুল আমাদের সঙ্গে গাজীপুরের বড়বাজার জয়বাংলা এলাকার ভাড়া বাসার পাঁচতলায় থাকতো। গত ২০ জুলাই সকালে বন্ধুদের ডাকে বাসা থেকে বের হয়। ওইদিন দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাই। আমরা হাসপাতালে গিয়ে মিনহাজের মরদেহ নিয়ে এসেছি। মিনহাজের বাম হাতের কনুই ভেদ করে একটি গুলি কোমরে ঢুকে আর বেরোয়নি। আমরা রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে মিনহাজের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে পরদিন সকালে দাফন করেছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুরের গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত মিনহাজুলের মরদেহ সেসময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। পরে নিহতের চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ আজ উত্তোলন করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ-আল-মাহবুব ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিনহাজুলের মরদেহ উত্তোলনের সময় তার পরিবার সহযোগিতা করেছে। মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
চম্পক কুমার/এমজেইউ