ছিনতাইকৃত মোবাইলের সূত্র ধরে হত্যায় জড়িত ৬ জন গ্রেপ্তার

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে তাজবির হোসেন শিহান (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মালামাল ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রবিউল ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম পাশে হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনার চার দিনের মাথায় গাজীপুর জেলা পুলিশ গতকাল সোমবার রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
নিহত তাজবির হোসেন শিহান কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক জামতলা এলাকার তানভির হোসেন নান্নু মিয়ার ছেলে। শিহানের মা কালিয়াকৈরের মৌচাক স্কাউট উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষিকা। শিহান দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার হালিম উদ্দিনের ছেলে তাকওয়া পরিবহনের চালক মো. সরওয়ার হোসেন শারু (২৮), কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার আলী আজগরের ছেলে সিএনজিচালক নাজিম উদ্দিন নয়ন (৩৫), একই জেলার ওলিপুর থানার আজগর আলীর ছেলে সিএনজিচালক মো. ছাইফুল ইসলাম (৪২), লক্ষ্মীপুর সদরের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আজমেরী গ্লোরী বাসের হেলপার মো. জুয়েল (২৪), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার আব্দুল জলিলের ছেলে তাকওয়া পরিবহনের স্টাফ মো মিলন (২৭) ও ভোলার চরফ্যাশনের মৃত সুলতান বয়াতির ছেলে চা দোকানি মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫)।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রবিউল ইসলাম জানান, গত ১২ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে শিহান বাড়ি থেকে বের হয়ে মৌচাক বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। পরে মাজার রোডের সামনে থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে ৫ জন যুবক হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে তাকে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর যখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার তার বাবা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে থানার ওসি রিয়াদ হোসেন ও তার দলের সদস্যরা তদন্ত শুরু করেন। তারা জানতে পারেন ঘটনার দিন ছিনতাইকারীরা শিহানকে হত্যার আগে একই এলাকায় এক কাভার্ডভ্যান চালক মো. মাসুদুর রহমানকে (৪৬) আহত করে। মাসুদুর রহমানের দেওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় চা দোকানি আনোয়ারকে প্রথমে গাজীপুরের সালনা এলাকা থেকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাই করা মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতভর সালনা, বাসন, কোনাবাড়ী, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপর ছিনতাইকারী যারা তার কাছে মোবাইল বিক্রি করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি এবং ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট কার্ড, ভিসা কার্ডসহ মোট ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
তিনি আরও জানান, মূলত এরা একটি ছিনতাইকারী চক্র। পরস্পর মিলে বিভিন্ন ও সিএনজির চালকের পরিচয়ের আড়ালে এরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। এরা সিএনজি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। পথে নিরাপদ স্থানে কোনো মানুষ পেলে তারা তাকে টার্গেট করে ছিনতাই করে সিএনজি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সিএনজিযোগে দীর্ঘদিন ধরে চন্দ্রা, মৌচাক, কোনাবাড়ী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, টঙ্গী, সালনা, শ্রীপুর ইত্যাদি এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তারা ছিনতাইকৃত ৪টি মোবাইল ফোন আসামি আনোয়ারের কাছে ৮৫০০ টাকায় বিক্রয় করে।
জানা যায়, নিহত শিহান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করেছেন। শিহান উত্তরার একটি কল সেন্টারে চাকরি করতেন। তিনি ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনে ২০০০ সাল থেকে সংগীত বিষয়ে অনুশীলন করেন। এছাড়াও তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্লাব ফর পারফর্মিং আর্টসের সদস্য ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সুপার (অপরাধ) আমিনুল ইসলাম, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ হোসেন, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
শিহাব খান/আরএআর