৪৪ দিন পর দেশে এলো দুবাইয়ে খুন হওয়া যুবকের মরদেহ

দুবাইয়ের শারজা শহরে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় মুন্সীগঞ্জের সন্তান দুবাইয়ের ব্যবসায়ী শাওন বেপারীকে (২৬) খুনের ৪৪ দিন পর মরদেহ দেশে এসেছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তার মরদেহ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ মহাকালি গ্রামে আনা হয়। এরপর বিকেলে নামাজের জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে, গত ৩ নভেম্বর মধ্য রাতে ৯ জন মিলে চাইনিজ কুড়াল এবং ছুরি দিয়ে কুপিয়ে, রড দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে।
শাওন মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ মহাকালি গ্রামের মরহুম আমিন বেপারীর ছেলে।
নিহত শাওনের মামা আলেক মাদবর বলেন, তিন বছর ধরে দুবাই অবস্থান করছিলেন শাওন। প্রথমে চাকরি করলেও পরে আট মাস আগে রেস্তোরাঁ ব্যাবসা শুরু করেন। একইসঙ্গে যৌথভাবে সেখানে গোডউন ভাড়া নিয়ে রাখি ব্যবসা করছিলেন। এসব মিলে তিনি ১৫ লাখ টাকা পেতেন। পাওনা টাকা নিয়েই বিরোধ হয়। এর কয়েক মাস আগেও তার ওপর আঘাত হয়। তবে প্রাণে বেঁচে যান। আলেক মাদবর দাবি করেন, এর আগে স্থানীয়ভাবে ভিডিও কলে এই পাওয়া নিয়ে বিচার সালিশও হয়। রাখি মালের ব্যবসায় পাওনা ১০ লাখের স্থলে ৮ লাখ টাকা ফয়সলা হয়।
এ ছাড়া রেস্তোরাঁ আরও ৭ লাখ মিলে ১৫ লাখ টাকা পাওনা হন। এরই মধ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শাওনকে গ্রেপ্তার করানো হয়। ১০ দিন জেল খানায় ছিল শাওন। পরে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পেয়ে মুক্তি দেয়। এরপরই দুবাইয়ে সব ব্যবসা গুটিয়ে পাওয়া টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল শাওন। দুবাইয়ে বাংলাদেশি সেই টাকার বিষয়ে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
আলেক মাদবর আরও বলেন, দুবাইয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নৈরপুকুরপাড়ের দুই সহোদর শাহআলম ও মো. শ্যামল, ডাকাততলা গ্রামের শাহিন মিয়া, আজিম পুরা গ্রামের রতন মিয়া এবং রাঢ়িপাড়ার পেলারপাড়ের মো. শাকিল ও ডেকরাপাড়ার স্বপন মিয়ারা মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহতের স্ত্রী লামিয়া ইসলাম ঊর্মি বলেন, দুবাইয়ে যাওয়ার পর প্রথমে চাকরি করলেও মৃত্যুর আট মাস আগে শাওন শুরু করেন রেস্তোরাঁ ব্যবসা। পাশাপাশি গুদাম ভাড়া নিয়ে রাখি ব্যবসাও করছিলেন। ওই ব্যবসার পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে বিরোধ নিরসনে স্থানীয়ভাবে ভিডিওকলে সালিশও হয়। রাখি ব্যবসায় পাওনা বাবদ শাওনকে ৮ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আরও ৭ লাখ টাকা পেতেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজিব দে বলেন, দুবাইয়ে ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দেশে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতের আদেশে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় নিহতের মা শেফালী বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
ব.ম শামীম/এএমকে