ছাত্রাবাস ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা, থমথমে আনন্দ মোহন কলেজ

ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংর্ঘষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ছাত্রাবাস ছেড়ে যাননি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে কলেজ ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গতকাল রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করে ১৩ জানুয়ারি সকাল ৮টার মধ্যে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমান উল্লাহ। সেই সঙ্গে আগামী তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাস ত্যাগ করলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনটি কারণে তারা ছাত্রাবাস ছাড়বেন না। এগুলো হলো- ২০২১-২২ সেশনের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান, আগামী ২৭ জানুয়ারি মাস্টার্স ২১-২২ সেশনের পরীক্ষা শুরু হবে এবং ছাত্রাবাস ছাড়লে দখল হয়ে যাবে।
পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থী রামীম, রাকিবসহ কয়েকজন জানান, গুটি কয়েক সাধারণ শিক্ষার্থী ভয় ও আতঙ্কে হল ত্যাগ করেছে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হলে রয়েছে। আমরা কেউ ছাত্রাবাস ছাড়ব না।
ছাত্রাবাসের বাইরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সূত্র জানায়, বিগত সময়ে ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিয়ে ছাত্রাবাসে সিট নিয়েছে ছাত্রশিবিরের ছেলেরা। এখন তারা সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ছাত্রাবাস দখল করে আছে। এর মধ্যে তাদের অনেকেই বিবাহিত, অছাত্র ও চাকরিজীবী রয়েছে। ফলে কলেজে তাদেরপন্থি কিছু শিক্ষাকরাও ছাত্রাবাস না ছাড়তে তাদের মদদ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই সিট নবায়নের মাধ্যমে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকুক।
জানতে চাইলে এক শিক্ষক কলেজের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস কেন ছাড়বে, ওদের সামনে পরীক্ষা আছে।
ছাত্রাবাস বন্ধের বিষয়ে ওই শিক্ষক বলেন, এটা অধ্যক্ষের বিষয়।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, সংঘর্ষ বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সঙ্গে শিবির সম্পৃক্ত নয়।
এ সময় কলেজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। আশা করছি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আর হবে না।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমান উল্লাহ বলেন, ছাত্রাবাস সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের একটি টিম সেখানে যাচ্ছে, তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ছাত্রাবাস থেকে বের করার চেষ্টা করছি। আশা করছি শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে দেবে।
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন
এদিকে গতরাতে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মর্ধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলকে অহেতুক জড়ানোর প্রতিবাদে কলেজ ফটকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা বলেন, গতকাল অধ্যক্ষের কক্ষে ছাত্রাবাসে সিট নবায়ন নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির মিটিং চলছিল। এ সময় ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা এসে কলেজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সিনিয়র শিক্ষকদের ক্ষমা চাইতে বলেন। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রদলসহ কলেজের সকল ক্রিয়াশীল সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা হামলা করে অধ্যক্ষের কক্ষে জুতা নিক্ষেপ করে। মূলত এ ঘটনার জের ধরেই শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ ঘটে। এতে শিক্ষার্থী জুবায়ের, বিজয়, মেহেদী, জুবায়েরসহ আরও অনেকেই আহত হয়।
এ সময় ছাত্রদল নেতারা ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করে বলেন, ছাত্রাবাসে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না, অবৈধ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিতদের বের করতে হবে। হলে ৫ আগস্টের পর যারা অবৈধভাবে উঠেছে তাদের নবায়ন করা যাবে না এবং নবায়ন ফি ৬৫০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কলেজ ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে হলের সিট বরাদ্দের নবায়ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হয়। এ সময় ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর