ছেলেসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে বাবইকে গ্রেপ্তার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে ভাটারা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি জানান, মতিউর রহমানের নামে বিভিন্ন থানায় ২৫টি ও তার ছেলের নামে ছয়টি মামলা রয়েছে।
ভাটারা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হক জানান, ভাটারা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মতির নামে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে। তবে মামলা তদন্তের স্বার্থে এর বেশি তথ্য জানাননি ভাটারা থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মতিউর রহমান মতি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন পরপর দুইবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন এবং একবার প্যানেল মেয়র হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ২০২২ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। ওই মামলায় ২০২৩ সালের জুন মাসে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একটি মামলায় মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে তার থেকে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অবস্থান গোপন করারও অভিযোগ আনা হয়।
অপর মামলায় তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা করার অভিযোগ করে দুদক। পরে সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন করে তা রূপান্তর, হস্তান্তর ও স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়। দুই মামলায় মতিউর রহমান মতি ১৫ দিন জেল খেটে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন।
জানা গেছে, মতিউর রহমান মতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন আদমজী সুমিলপাড়ার আইলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। আশির দশকে তিনি সুমিলপাড়া এলাকায় মুনলাইট সিনেমা হলের টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি করতেন। তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা সফর আলী ভূঁইয়ার হাত ধরে রাজনীতিতে নাম লেখান। নব্বই দশকে এসও রোড এলাকায় বিএনপির মিছিলে বোমা হামলা করে আলোচনায় আসেন মতি। ওই বোমা হামলায় মনা নামের এক পথচারী নিহত হয়েছিলেন। তার দুই বছর পর নিজ বাড়ি সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের ওপর এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার পর থেকেই তিনি বনে যান এলাকার ত্রাস।
এরপর জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগ দেন যুবলীগে। ২০০১ সালে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বিদেশে। ২০০৯ সালে দেশে এসে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আত্মসমর্পণ করে প্রায় এক বছর জেল খেটে জামিনে বের হন। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়কের পদ পান। এরপর থেকেই বদলাতে থাকে তার ভাগ্য। গড়তে থাকেন অর্থের পাহাড়। ২০১৬ সালে নাসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে হন ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তৃতীয় নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
একদিকে জনপ্রতিনিধি অপরদিকে থানা যুবলীগের আহ্বায়ক হওয়ায় ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন মতি। এলাকার অবৈধ আয়ের উৎস নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন খাত থেকে অবৈধ পন্থায় হাজার কোটি টাকার মলিক হন মতি। নব্বই দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরক, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অসংখ্য মামলা হয়। দুদকের মামলা চলমান থাকার পরও থেমে থাকেনি মতির অবৈধ সম্পদ অর্জনের গতি। সর্বশেষ গত বছরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলায় আসামি করা হয় মতিউর রহমান মতিকে।
মেহেদী হাসান সৈকত/এমজেইউ