৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তথ্য বাতায়ন থেকে সরানো হয়নি হাসিনার ছবি

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তথ্য বাতায়নে শোভা পাচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা ই-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (আঞ্চলিক) কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা বিএডিসি (এমআই) অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তথ্য বাতায়নে দিল্লিতে নির্বাসিত শেখ হাসিনার জনসভার সম্বলিত ছবি দেখা গেছে। পরে বিষয়টি টের পেয়ে একাধিক ওয়েবসাইট আপডেট করেন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে প্রবেশ করা যায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকজন বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেল রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোতে তার লোকজন থেকে গেছে। তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য এখনো বিভিন্ন ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
অন্যদিকে, নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত আপডেট না হওয়ায় ওয়েবসাইটগুলো ভিজিটে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি এবং উদাসীনতার ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ।
টানা এক সপ্তাহ ধরে সবশেষ আজ সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাইটগুলো ভিজিটের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যার স্কিন রেকর্ডিং প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সরকারি দপ্তর থেকে প্রদেয় সেবাগুলো প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটের সমন্বিতরূপে ‘বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ নামক ওয়েব পোর্টাল চালু করে বিগত সরকার।
তথ্য বলছে, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, পর্যটন ইত্যাদি তথ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এ ওয়েবসাইটগুলো চালু করা হয়। এ পোর্টালের মাধ্যমে যে কোনো বিজ্ঞপ্তি, গেজেট, ই-সেবা, সরকারি ফরম, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তালিকা, ই-ডিরেক্টরি, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন প্রকল্পের বিবরণ, সরকারি সুবিধাভোগীদের তালিকা, জনপ্রতিনিধিদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য জনগণের পাওয়ার কথা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো ওয়েবসাইটেই নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না।
এস এম মনিরুজ্জামান নামে এক সমাজ উন্নয়ন কর্মী বলেন, ইতিহাস সাক্ষী—আওয়ামী লীগের ইতিহাস যতটা না গৌরবের, তার চেয়ে বেশি লজ্জার। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কীভাবে যেন ষড়যন্ত্রকারীরাই দলটির সামনের কাতারে স্থান পেতে থাকে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ঘটানো গেলেও তাদের বপিত বীজ গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নির্বাহী ক্ষমতাগুলোতে তাদের দোসররা টিকে রয়েছে। আর এজন্য তাদের নানা কর্মকাণ্ড এখনও জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে কৌশলে।
ঠাকুরগাঁও জেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অফিসের প্রোগ্রামার মো. ওয়াদুদূর রহমান মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট আপডেট করার দায়িত্ব স্ব স্ব দপ্তরের। আবার অনেকের অজানা থাকার কারণে এবং যে কর্মকর্তা অপারেট করতেন তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু দপ্তর তথ্য আপডেট করতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা শিগগিরই ওয়েবসাইটের তথ্য নিয়মিত আপডেট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যাতে সেবাপ্রত্যাশীরা খুব সহজে তথ্যসেবা পেতে পারেন।
এএমকে