আমরা কালো টাকার মালিকদের বরদাশত করব না : শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, লড়াই আমাদের শেষ হয় নাই। সুষ্ঠু একটা নির্বাচন আদায় করার জন্য আরও অনেক লড়াই আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সেখানে কালো টাকা আর পেশীশক্তি আগামীতে আমাদের ভোটের অধিকার যেন কেড়ে নিতে না পারে। এখন থেকে হাত মজবুত করতে হবে। বলে দিতে হবে আমরা মানুষ, সাধারণ কোনো প্রাণী নয় যে তোমাদের কালো টাকার কাছে বিক্রি হব। আমরা আর কালো টাকার মালিকদের বরদাশত করব না। আমরা আগামীতে ক্লিন হার্ট সম্পন্ন মানুষকে দেশের শাসন ক্ষমতায় দেখতে চাই।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, কথা দিচ্ছি আপনাদের দোয়ায়, আপনাদের ভালোবাসায়, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতে আসে, ইনশাআল্লাহ দেশের মালিক হব না। আমরা দেশের সেবক হতে চাই। সেদিন যদি জনগণের সেবা করতে পারি, জনগণের প্রয়োজনে সাড়া দিতে পারি, সেদিনই জীবনকে স্বার্থক মনে করব। এমন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে পাশে চাই।
জামায়াতের আমির বলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে, তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তারা কথিত উন্নয়নের গালভরা বুলি শুনিয়েছেন। সবশেষে তারা পরপর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানেরা ছোট্ট একটা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের যৌক্তিক দাবি বন্দুকের গুলির মুখে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। ঠিক তখনই ছাত্র-জনতা আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিল। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল। জনগণ তাদেরকে এক দফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনার ছিল না।
ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে ইনশাআল্লাহ। তরুণ-যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশীশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, বিগত দিনে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম ছিল, যে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কর্মভিত্তিক যোগ্যতার কোনো মিল ছিল না। যে কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে বিদেশে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায়নি। আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যার মাধ্যমে সন্তানেরা শিক্ষিত হয়ে দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই দেশবাসীর সেবা করবে। শিক্ষিতরা তাদের দায়-দায়িত্বগুলো বুঝতে পারবে, এমন একটি শিক্ষা আমরা চাই। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে নৈতিকতা ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ।
ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমির আলী আজম মো. আবু বকরের সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল আলীম, অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান, আবু তালেব, ড. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর