হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসককে পেটালেন যুবদল নেতা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেকিকেল অফিসার ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাসের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পৌর যুবদলের নেতা ইকতার রহমানের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিসাব-নিকাশকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি ইতোমধ্যেই এই যুবদলের পক্ষ থেকে মীমাংসা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করা হয়েছে।
চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১১টার দিকে স্থানীয় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে ফিরছিলেন তিনি। রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে হাসপাতাল চত্ত্বরে পৌঁছালে জীবননগর পৌর যুবদলের ১ নম্বর সদস্য ইকতার রহমান গালিগালাজ করেন এবং তার কাছে থাকা টর্চলাইট দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন। এতে মুখে রক্তজমাট বেধে ও ফুলে আহত হন তিনি। অভিযুক্ত ইকতার হোসেন চলে গেলে আমি বাড়িতে যাই এবং চিকিৎসা নিই।
কি কারণে হামলা হলো জানতে চাইলে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইকতার হোসেন মারধরের আগে আমাকে বলেন তুই আগে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করছিস। এখন বিএনপি করিস। উত্তরে জানাই, আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারি না। এরপরই তিনি আমাকে মারধর করতে শুরু করেন।
স্থানীয় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনার নেওয়া নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, গতকাল শনিবার রাতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনার নেওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে হিসাব-নিকাশে বসেছিলাম। প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাবলুর সঙ্গে ইকতার হোসেনের ভালো সম্পর্ক। তার সঙ্গেই থাকেন। গতকাল হিসাব-নিকেশ করার সময় তাকে না ডাকার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে হামলার মূল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা যে ব্যবস্থা নেবেন আমি মেনে নেব।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জীবননগর পৌর যুবদল নেতা ইকতার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেছি। আমি ভুক্তভোগী চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার কোনো শেয়ার নেই। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। গতকাল প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ চলছিল। আমি জানতাম না। পরে জিজ্ঞাসা করলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, তুমি চলে আসতে পারতে। এ নিয়ে মূলত এই ঘটনাটি ঘটেছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি দুংখজনক। হাসপাতালের চত্ত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জেনেছি।
রোববার রাতে জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঘটনাটি জেনেছি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসকে মামলা করার জন্য বলেছি। এখন পর্যন্ত মামলা বা অভিযোগ দেননি।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগত কারণে হলেও হাসপাতালের এরিয়ার মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসককে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।
আফজালুল হক/এমএএস