কৃষিতে লাভবান হতে হলে কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেছেন, কৃষিতে লাভবান হতে হলে কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। আমন ও বোরো মওসুমের মাঝে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা অনাবাদি রয়ে যায়। এই অনাবাদি জমিকে রবি মওসুমে সরিষা, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল চাষের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, বোরো-পতিত-রোপা আমন, শস্য বিন্যাসে সরিষা/সূর্যমুখী অন্তর্ভুক্তি করতে পারলে সমগ্র দেশে ৩.৬০ মিলিয়ন টন তেল ফসল উৎপাদন সম্ভব। যা থেকে বছরে ১.০৪ মিলিয়ন টন তেল পাওয়া যেতে পারে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার সাওরাইদ গ্রামে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা ও মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
ব্রি’র মহাপরিচালক, কালীগঞ্জে বোরো-পতিত-রোপা আমন, শস্যবিন্যাস প্রায় সাড়ে ২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। এ শস্যবিন্যাসের উন্নয়নের জন্য প্রথমত বোরো এবং রোপা আমন ধানের মধ্যবর্তী সময়ে তেল জাতীয় ফসল (সরিষা, সূর্যমুখী) চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারে। এছাড়া ভোজ্য তেলের জন্য আমরা পরনির্ভরশীল। প্রতি বছর প্রায় ২.৩ থেকে ২.৪ মিলিয়ন টন ভোজ্য তেল আমাদের আমদানি করতে হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইব্রাহিম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মসিউর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গাজীপুর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম খান।
আরও উপস্থিত ছিলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খায়রুল কায়েস, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবিএম জামিউল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্থানীয় শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
এদিকে প্রচলিত দ্বি-ফসলি শস্যবিন্যাসে তেল জাতীয় ফসল (সরিষা, সূর্যমুখী) অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস্ বিভাগ।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের বিদ্যমান সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে থাকে রাইস ফার্মিং সিস্টেমস্ বিভাগের বিজ্ঞানীরা।
বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফার্মিং সিস্টেম সাইট, কালীগঞ্জ, গাজীপুরে স্থানীয় ১০ জন প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের বসতবাড়িতে বছরব্যাপী সবজি চাষ, ছায়াযুক্ত স্থানে আদা-হলুদ চাষ, ফল গাছের ব্যবস্থাপনা, হাঁস-মুরগি, কবুতর ও ছাগল পালন এবং মজা পুকুরে কচুর সঙ্গে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এসব কাজে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের ছেলে-মেয়েরা অবসর সময়ে অংশগ্রহণ করে দৈনন্দিন সবজি ও আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষকেরা বাড়তি আয় করছেন।
রাইস ফার্মিং সিস্টেমস্ বিভাগের গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় একজন কৃষক তার ১০ শতাংশ বসতবাড়ির ৯.৫ শতাংশ জমিতে বছরব্যাপী সবজি চাষের মাধ্যমে ২,০০০ টাকা খরচ করে ৬,০০০ টাকা লাভ করেছেন।
রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের প্রধান ড. মো. ইব্রাহিম বলেন, আগে কৃষকেরা গড়ে ৫০ কেজি সবজি ভক্ষণ করতো, ৫ কেজি বিলি করতো এবং ৪০ কেজি বিক্রি করতো; যা বর্তমানে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে বেড়ে ১১১, ১২ এবং ৫৮ কেজিতে পৌঁছেছে। বসতবাড়ির ০.৫ শতাংশ ছায়াযুক্ত স্থানে আদা-হলুদ চাষ করে কৃষকেরা গড়ে ৮২ কেজি হলুদ এবং ৩৩ কেজি আদা উৎপাদন করেছে যা থেকে ২,০০০ টাকা খরচ করে ৬,০০০ টাকা লাভ হয়েছে।
এই কার্যক্রম শুরুর আগে কৃষকেরা বছরে গড়ে ৪৭ কেজি ফল উৎপাদন করতো; যা বর্তমানে উন্নত জাতের ফল গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৯০ কেজি উৎপাদিত হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় কৃষকেরা তাদের বসতবাড়ির উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করছে যা আগে করা হতো না।
মতবিনিময় সভায় কৃষকরা বলেন, আমন ধান চাষ করার পর তিন মাস জমিগুলো পতিত থাকতো। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ওই জমিগুলোতে সূর্যমুখী এবং সরিষা চাষ করা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হবে। কৃষক লিটন মন্ডল জানান, ফুল হচ্ছে মানুষের মনের খোরাক। তাই সূর্যমুখী এবং সরিষা চাষ করে আমরা ফসলের পাশাপাশি কৃষি পর্যটনের সুযোগ তৈার করে বাড়তি আয় করছি ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে।
এমএসএ
