গ্রাহকের তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে আজিজ কো-অপারেটিভ

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স (এসিসিএফ) ব্যাংকের নামে তিন শতাধিক গ্রাহকের প্রায় তিন কোটি টাকা আমানত নিয়ে উধাও হয়েছেন ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুরুর দিকে মুনাফা দিলেও ছয় মাস আগে তা বন্ধ করে দেন তারা। এরপর তিন মাস ধরে ব্যাংকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গার সৌদিয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ব্যাংকের অফিসে তালা ঝুলছে। ভেতরে পড়ে আছে টেবিল-চেয়ার ও ব্যবস্থাপকের কক্ষের আসবাবপত্র। বেশ কিছুদিন থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ভবনের মালিক মোত্তালেব হোসেন জানান, ২০১৬ সালে মাসিক ৭ হাজার টাকায় ব্যাংকটি ভাড়া নেয় তারা। বর্তমানে ১০ মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। টাকা ও ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়েই কর্মকর্তারা উধাও হয়ে গেছেন।
ভুক্তভোগী আমানতকারীদের অভিযোগ, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল বারি, অ্যাকাউন্টেন্ট তাজুল ইসলাম ও সিনিয়র অফিসার বেলামিন হোসেন প্রথমদিকে গ্রাহকদের নিয়মিত মুনাফা দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। নানা টালবাহানার পর গত তিন মাস আগে শাখাটি বন্ধ করে কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
গ্রাহকরা জানান, শুরুতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও এখন কেউ ফোন রিসিভ করছেন না। উল্টো টাকা ফেরত চাইলে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
ভাঙারি ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, বছর পাঁচেক আগে ৫ লাখ টাকা আমানত রেখেছিলাম। কিস্তিতে কিছু টাকা পেলেও ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আটকে রেখেছে ব্যাংক। এখন অফিস তালাবদ্ধ, কেউই ফোন ধরছে না।
একই অভিযোগ করেছেন পূর্বপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকরুল ইসলাম, বিজিবি সদস্য দিদারুল আলম ও ব্যবসায়ী নাজমুল আলমসহ আরও অনেকে। তাদের বক্তব্য, ব্যাংকটি হঠাৎ বন্ধ করে ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ কারণে তাদের আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে জেলা সমবায় অফিসার ফরিদ উদ্দিন সরকার বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছিল। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছি। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে গ্রাহকদের এ ব্যাংকে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুক্তভোগী তিন শতাধিক গ্রাহক। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রতারিত গ্রাহকদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, টাকা ফেরতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না, নাকি এই প্রতারণা চিরস্থায়ী ক্ষত হিসেবে রয়ে যাবে।
রিপন আকন্দ/এমএএস