বাহাত্তরের সংবিধান অবৈধ, নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে : তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা অবৈধ সংবিধান। যারা এ সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, তারা পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্য। পাকিস্তানের সংবিধানের আওতায় নির্বাচিত গণপরিষদের সদস্যরা যে সংবিধান প্রণয়ন করেছে, তা বৈধ হতে পারে না। যাত্রাই শুরু করেছি আমরা অবৈধভাবে।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, বাহাত্তরের সংবিধান চলবে না। নতুন করে সংবিধান রচনা করতে হবে। এদেশের মানুষের চিন্তা চেতনা ও ১৯৭১ সালে যে চিন্তা চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চিন্তার আলোকে সংবিধান হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ সংবিধান প্রণয়ন করা নয়, তবে নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করতে হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। এমন কিছু মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শরীয়তপুর পৌরসভা মাঠে দলের কর্মী সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই জামায়াত নেতা এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেখানে কখনোই স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হয় না। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হয়নি, ১৯৭১ এ সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, সেই স্বাধীনতা পূর্ণতা অর্জন করেনি। এরপর ২০২৪ এর স্বাধীনতা বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। এর কারণ, আমরা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অযোগ্য নেতৃত্ব পেয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ভুল নেতৃত্বের কারণে আমরা দেখলাম, গণতন্ত্র হত্যা করে তারা বাকশাল কায়েম করল। বাকশালের পরিণতি ভিন্ন হয়েছিল, আপনারা দেখেছিলেন। শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে আমরা জেল জুলুমের স্বীকার হয়েছি, তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে বলেছি, আল্লাহ হাসিনার পদত্যাগ চাই। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, বান্দা তুমি অধৈর্য হইও না, তুমি চাইছো পদত্যাগ, আমি করিয়েছি দেশত্যাগ।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এখন অনেকে বলে, এবার জামায়াতকে ক্ষমতায় আনব। আমরা চেয়েছি পদত্যাগ, কিন্তু আল্লাহ মিরাকেল দেখিয়ে করিয়েছেন দেশত্যাগ। এখন যদি সবাই বলে একবার জামায়াতকে দেখব। সবাই যদি বলে, আর আল্লাহ মিরাকল দেখান তবে জামায়াত ক্ষমতায় যাবে। মানুষ যদি আস্থা রাখে, তবে মিরাকল হবে। কেননা বাকশাল শেষ, ৬ দফা শেষ, ১৮ দফা পারে নাই, ১৯ দফা পারে নাই। সোনার বাংলা, সবুজ বাংলার স্লোগান বাংলার মানুষের কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই। এবারের দফা এক দফা। সেই দফা হলো, একবার জামায়াতে ইসলামীকে দেখব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভাইয়েরা ৫৪ বছর ধরে নির্যাতিত হয়েছেন, ঠকেছেন। আমাদেরকে একবার দেন, যদি খুব খারাপ হয়, তবে আরেকবার ঠকবেন। তাতে না হয় ৫৪ সাথে আর ৫ যোগ হবে এই তো। কিন্তু একবার আমাদেরকে দেন। দেখুন, যদি জামায়াতে ইসলামী নৈতিকতা ও কল্যাণের ভিত্তিতে আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করে নারীর অধিকার, পুরুষের অধিকার, শ্রমিক, মেহনতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাহলে আপনি দেবেন না কেন, আপনারই তো লাভ।
কর্মী সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর রব হাশেমীর সভাপতিত্বে এবং ডামুড্যা পৌরসভা আমির আতিকুর রহমান কবীর ও জেলা শুরা সদস্য মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন, ফরিদপুর টিম সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, শামসুল ইসলাম আল বরাটি, ফরিদপুর টিম সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা খলিলুর রহমান, গোপালগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক রেজাউল করিম, মাদারীপুর জেলা আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কে এম মকবুল হোসাইন, শরীয়তপুর জেলা সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মাসুদুর রহমান বক্তব্য দেন।
সাইফ রুদাদ/আরএআর