নাটোরে দুর্নীতিবাজদের আতঙ্ক ঢাকা পোস্ট

বস্তুনিষ্ঠ, সত্য ও নির্ভীক সাংবাদিকতার এক অনন্য মাধ্যম হলো ঢাকা পোস্ট। আমি মনে করি ঢাকা পোস্ট কেবলমাত্র একটি সংবাদমাধ্যমই নয়, এটি আদর্শ ও সংগ্রামের চিহ্ন।
প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই, ঢাকা পোস্ট সত্যের সাথে সন্ধি স্লোগান নিয়ে সত্যের সন্ধানে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অবিচল অবস্থান নিয়েছে। সমাজের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রামরত মানুষ ও ঘটনাকে আলোচনার মঞ্চে আনা, মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা রক্ষায় ঢাকা পোস্টের ভূমিকা অতুলনীয়।
আমি নাটোর প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাংবাদিকতার গভীরে প্রবেশের এক অনন্য সুযোগ পেয়েছি।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমার সাংবাদিক জীবনের প্রতিটি ধাপেই একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ঢাকা পোস্টে কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে সত্যের পথে অটল থেকে সংগ্রাম করা যায়, কিভাবে সমাজের অপ্রকাশিত ঘটনা সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা যায়।
আমি ঢাকা পোস্টে যুক্ত হওয়ার পর নাটোরের বেশ কিছু সংবাদ করেছি, যার প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জনক। যা সামনের দিনে আমাকে আরো দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল চলতি মাসে করা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে। নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের হারিগাছা গ্রামের ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া হোসেন শামা। চলতি বছরে পাবনা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সে। বাবার আয় দিয়ে মেডিকেলে পড়াশোনার ব্যয়ভার এমনকি ভর্তির খরচ জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল সুমাইয়া। এ নিয়ে ঢাকা পোস্টে 'মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত সুমাইয়ার' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ প্রশাসনের নজরে আসে। সংবাদ প্রকাশের পরদিনই এক বিএনপি নেতা সুমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে ভর্তির যাবতীয় খরচ সুমাইয়ার হাতে তুলে দেন। এরপর নাটোরের জেলা প্রশাসকও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সুমাইয়ার পাশে দাঁড়ান। সুমাইয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছিলেন 'আমার সফলতার সঙ্গী হয়ে থাকবে ঢাকা পোস্ট'।
শুধু মানবিক সংবাদ নয় দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ঢাকা পোস্টের সংবাদ জেলায় বিভিন্ন সময় আলোড়নের সৃষ্টি করে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলোতে দুর্নীতির মহোৎসবের ঘটনা ঢাকা পোস্ট প্রচার করে। যার ফলশ্রুতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। গতবছরের শুরুদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নাটোর অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে। 'নাটোর বিআরটিএ অফিসের ভেতর বসেন দালাল, চুক্তিতে করে দেন লাইসেন্স' শিরোনামে ঢাকা পোস্ট একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদটিকে আমলে নিয়ে তিনবদিন পরেই নাটোর বিআরটিএ অফিসে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে এসে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার কথা জানান দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর কিছুদিন পরেই বিআরটিএ অফিসের এক কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি দেওয়া হয়।
একইভাবে নাটোর পাসপোর্ট অফিস দালালদের সক্রিয় সিন্ডিকেটের কথা তুলে ধরে ঢাকা পোস্ট। সেখানে সেবা গ্রহীতাদের সামান্য সমস্যায় বেকায়দায় ফেলে অফিসের আনসার সদস্য এবং দালালরা নির্ধারিত অংকের টাকা আদায়ের চিত্র উঠে আসে। এ নিয়ে 'নাটোর পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে দালালরা, ১৫শ টাকায় কমে দুর্ভোগ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। পরবর্তীতে পাসপোর্ট অফিসের তিনজন আনসার সদস্যকে সেখান থেকে বহিষ্কার করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

এরকম আরও দুর্নীতির ও অনিয়মের সংবাদ ঢাকা পোস্টের প্রকাশের পর জেলার দুর্নীতিবাজদের যেমন ভিত কেঁপে ওঠে তেমনি মানবিক সংবাদগুলো মানুষকে মানবতার শিক্ষা নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর স্পৃহা জাগ্রত করেছে।
এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পেশাদারিত্বের যে অর্জন ও সম্মানিততা এসেছে, তা শুধু আমার সাংবাদিকতা ক্ষেত্রকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং সমাজের জ্ঞানভিত্তিক ও নৈতিক দিকেও আলোকিত করেছে। তাই ঢাকা পোস্ট আমার সাংবাদিকতায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের গল্পগুলো সমগ্র দেশ ও আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
একজন সাংবাদিক হিসেবে, মনে করি সত্য তুলে ধরা শুধু খবরের প্রকাশই নয়, এটি সমাজের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম। ঢাকা পোস্টের সেই অবিচল অঙ্গীকার ও নৈতিকতা আমাকে সর্বদা অনুপ্রাণিত করেছে। ঢাকা পোস্টের সংগ্রাম ও সাফল্যের এই দীপ্তি আমাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এভাবেই আমরা সত্যের পথে অটল থেকে, সবাই মিলে আগামীর দিকে এগিয়ে যাব।
আরকে