ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে যেভাবে পরিচিতি পেয়েছি

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘সত্যের সাথে সন্ধি’ স্লোগান নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ঢাকা পোস্ট। যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পেতে থাকে বহুল পঠিত এই গণমাধ্যম। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫ম বর্ষে পদার্পণ করছে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা পোস্ট আয়োজিত নিজ জেলায় নিজ রিপোর্টে কুমিল্লার কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো।
১. ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ‘৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ৫ হাজারে ধামাচাপা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। ওই বছরের ৬ জুলাই কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের গজারিয়া ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে দিনমজুর মোস্তফার ৮ বছরের মেয়ে সাদিয়াকে বাড়ির পাশের আখ ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করেন একই বাড়ির ফজর আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। এ ঘটনায় ১১ জুলাই স্থানীয় একটি মাদ্রাসা মাঠে সালিশ বসে। সালিশে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার ধর্ষণকারী বৃদ্ধের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি সুরাহা করেন।
ওই ঘটনার একটি গোপন সংবাদ আসে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে। পরে ১২ জুলাই ঘটনাস্থলে সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরকান এলাহী অনুপমের বক্তব্য নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করা হয় ঢাকা পোস্টে। সংবাদ প্রকাশের পরদিন ১৪ জুলাই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষণকারী বৃদ্ধ মতিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে শিশুটির বাবা-মাকে খবর দিয়ে লালমাই থানায় এনে ধর্ষণের মামলা দায়ের করিয়ে বৃদ্ধ মতিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২. ২০২২ সালের ৩০ জুলাই ‘কুমিল্লায় সাবেক মেম্বারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলেন ইউএনও’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। ওই বছরের ২৭ জুন বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ৬ আগস্ট অভিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল হক মীরকে বদলি করে বান্দরবান পাঠান তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন।
৩. ২০২২ সালের ২১ জুন ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয় ‘এবার কুমিল্লায় পদ্মা-সেতুর জন্ম’ শীর্ষক একটি সংবাদ। সংবাদটি প্রকাশের পর সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সেই সংবাদটি দেশের সকল গণমাধ্যম গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে। ওই সংবাদটি প্রকাশের পর প্রতিবেদকের মাথায় একটি প্রশ্ন জাগে, আদৌ জন্ম নেওয়া জমজ দুই শিশুর নাম আসলেই পদ্মা-সেতু রাখা হয়েছে কিনা। সেই উত্তরের খোঁজে প্রতিবেদক ওই দুই শিশুর খোঁজ করতে থাকে। অবশেষে ওই বছরের ২ আগস্ট শিশু দুটির বাড়ি জেলার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। শিশু দুটির মা এবং দাদার সাথে দেখা কথা হলে তারা জানান, শিশু দুটির নাম পদ্মা-সেতু বদল করে উম্মে হানি আয়েশা ও আরোহী আঁখি রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল হাসান পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। তিনি ওই জমজ শিশু দুটির নাম পদ্মা-সেতু রাখেন শিশু দুটির পরিবারের মতামত না নিয়েই। ওই বছরের ২ আগস্ট ‘কুমিল্লার সেই জমজ দুই শিশু পদ্মা ও সেতুর নাম বদলে দিয়েছে পরিবার’ শীর্ষক একটি ফলোআপ সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। যা আবারও দেশজুড়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে। আবারও দেশের সকল গণমাধ্যম ফলাও করে এই সংবাদটি প্রকাশ করে।
৪. ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘কোমরে পিস্তল নিয়ে ঘুরছেন ইউপি চেয়ারম্যান’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। ওই সংবাদটি প্রথমবারের মতো ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়। যা পরবর্তীতে দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দেয়। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা খলিলুর রহমানের ছবি ছিল এটি। ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর দেশের দেশের সকল গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে স্থান পায় সংবাদটি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন থেকে চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করে বরুড়া থানায় অস্ত্রটি জমা দিতে নোটিশ দেওয়া হলে চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান তার পিস্তলটি বরুড়া থানায় জমা দেন।
৫. ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি ‘কন্টেইনারে মালয়েশিয়া যাওয়া কিশোর কুমিল্লার দিনমজুরের ছেলে’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার সেই সংবাদটিই দেশের কোনো গণমাধ্যমে প্রথম প্রকাশিত হওয়া প্রথম। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া এমভি ইন্টেগ্রা’ জাহাজের একটি খালি কনটেইনারে আটকা পড়ে রাতুল নামে এক কিশোর। ১৬ জানুয়ারি মালেশিয়ার কেলাং বন্দরে জাহাজের একটি খালি কনটেইনারের ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পান নাবিকরা। এরপরই কেলাং বন্দরকে জানানো হয়। পরদিন ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় জাহাজটি জেটিতে এনে কনটেইনার খুলে রাতুল নামের মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।
প্রথমে ধারণা করা হয় রাতুল নামে সেই কিশোর একজন রোহিঙ্গা। কিন্তু টেলিভিশনে রাতুলের ছবি দেখেন তার বাবা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়নের সাত পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর ফারুক মিয়া। তাকে চিনতে পেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান হাওলাদারের কাছে যান। ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের এক লোকের মাধ্যমে প্রতিবেদকের কাছে খবরটি আসে। ওইদিনই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বুলে সংবাদটি প্রকাশ করা হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বাংলাদেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় রাতুলকে।
৬. ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর ‘কাতার সোজা করতে বলায় ইমামকে পানিতে চুবাতে চাইলেন ইউএনও’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। জুমার নামাজের সময় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা কাছারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঘটনাটি ঘটেছিল। ঢাকা পোস্টে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে। ব্যাপক ভাইরাল হয় ঘটনাটি। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেই ইমাম মাওলানা আবুল বাসারকে সরি বলে কোলাকুলি করেন তৎকালীন লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফোরকান এলাহী অনুপম। এ ঘটনার পর ওই বছরের ২২ অক্টোবর সেই ইউএনও ফোরকান এলাহী অনুপমকে রাঙামাটির বরকল উপজেলায় বদলি করা হয়।
৭. ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন চাঙা হয়। কোটার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা একের পর এক আন্দোলনের ডাক দিতে থাকেন। ওই বছরের ১১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী অংশে অবস্থান নিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনের সামনে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনার মিনিট বিশেকের মধ্যে ঢাকা পোস্টে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে কুমিল্লার ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এখানে উল্লেখ্য ওই বছরের ১৮ জুলাই কোটবাড়ী বিশ্বরোডে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ঢাকা পোস্টের কুমিল্লা প্রতিবেদক আরিফ আজগর আহত হন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে পাশের একটি স্কুল ভবনে নিয়ে তার শুশ্রূষা করেন তার সাথের কয়েকজন সাংবাদিক।
৮. ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর ‘মা নেই-বাবা কারাগারে- বন্যায় নিল ঘর, তিন শিশু নিয়ে বিপাকে দাদি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। ঘটনাটি ছিল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকার। মাদকাসক্ত বাবা সাব্বির হোসেনের সাথে ঝগড়া করে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন শিশু তিনটির মা বৃষ্টি আক্তার। পরে মাদক নিয়ে আটক হয়ে জেলে যান তাদের বাবা সাব্বির হোসেন। পরবর্তীতে ১০ বছরের শিশু তিনটির বয়স যথাক্রমে সিনথিয়া, ৩ বছরের জেসিকা এবং দুধের শিশু ইরফানকে লালন-পালন করার দায়িত্ব নেন তাদের দাদি নিলুফা। ওই বছরের ২২ আগস্ট রাতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর লেকের বাঁধ খুলে দেওয়ায় গোমতী নদীর পানিতে তলিয়ে যায় তাদের বসত ঘরটি। ঢাকা পোস্টে ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে বুড়িচং উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। পরবর্তীতে সরকারিভাবে শিশু তিনটির ভরণপোষণে দাদিকে আর্থিক সহায়তা এবং ঘর নির্মাণে সহযোগিতা করা হয়।
৯. ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর ‘কুমিল্লায় সমন্বয়কের দায়ের করা মামলায় আসামি মৃত ২ আ.লীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই সংবাদ দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ওই বছর ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে সদর দক্ষিণ থানায় ৯৬ জনের মামলা করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. এমরান। ওই মামলার নথি ঘেঁটে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সদর দক্ষিণ উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা আ. মমিনের নাম দেখে বিস্মিত হন। কারণ ২০২৪ সালের ২৪ জুন ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আ. মমিনের। যার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকা পোস্টসহ দেশের সকল গণমাধ্যমে।
পরবর্তীতে মৃত আওয়ামী লীগ নেতা আ. মমিনের বাড়িতে যান প্রতিবেদক। তার পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আর কেউ মৃত আছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় একই মামলায় আরও এক আসামি রয়েছেন যিনি বহু আগেই মারা গেছেন। ওয়াহিদুর রহমান ফরিদ নামে ওই আওয়ামী লীগ নেতা জোড় কানন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি কিডনিজনিত কারণে ২০২৩ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ঢাকা পোস্টে প্রথম ওই সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঢাকা পোস্টের ওই সংবাদের ফটোকার্ড এবং লিংক পোস্ট করা হয় আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
১০. ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘সাবেক এমপি বাহারের সঙ্গে জেলা বিএনপি নেতার ছবি নিয়ে তোলপাড়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসীম উদ্দিনের সাথে কুমিল্লার দানবখ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের সখ্যতার বিষয়টি লোকমুখে প্রচলিত ছিল। শেখ হাসিনার পালানোর পর বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় ভারতে পালিয়ে যান সাবেক সংসদ সদস্য বাহার ও তার মেয়ে কুসিকের অপসারিত মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা৷ এমনটাই বলাবলি চলছিল কুমিল্লাজুড়ে। ঠিক সেসময় ফেসবুক জুড়ে বাহারের সাথে বিএনপি নেতা জসীমের কিছু ছবি ভাইরাল হয়। ঢাকা পোস্ট সেসব ছবির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করে।
১১. ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর ‘বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুমের শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড দখল করে চাঁদাবাজির চিত্র তুলে ধরা হয় ঢাকা পোস্টে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী জসীম উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ দুটি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
১২. ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ‘স্কুলে যেতে চায় ১৩ বছরের সায়েম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। ওই সংবাদে বলা হয়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের জহির মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান সিয়াম অসুস্থ বাবার সাথে সংসারের হাল ধরতে পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়ে।
সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর তা নজরে আসে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং এর। তিনি প্রতিবেদকের মাধ্যমে সিয়ামকে ডেকে এনে তার বাবার চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করে সিয়ামের লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নেন।
১৩. ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর ‘সরকারি সম্পত্তি দখল করে সাবেক পিপির এতিমখানা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর এলাকায় নিজের বাবার নামে সরকারি সম্পত্তি দখল করে ১৫০ জনের কবরের ওপর এতিমখানা তৈরি করেন।
ঢাকা পোস্টে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে। যার তদন্ত এখনও চলছে। এছাড়াও কুমিল্লা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ওই এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রাপ্তির বিষয়টিও তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার তদন্ত কমিটি পীরযাত্রাপুর ওই এতিমখানার সামনে গণশুনানির আয়োজন করে স্থানীয়দের কথা শুনেছে।
১৪. চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ‘ডিসির বাসভবনে ছেলেসহ কাঁদলেন সাংবাদিক বাবা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। সংবাদের বিবরণে ছিল- কুমিল্লার সিনিয়র সাংবাদিক মোবারক হোসেনের একমাত্র ছেলে তাহসিন রাহমান কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সারকে গাছ উপহার দিয়ে ছবি তুলতে ডিসির বাংলোতে যায়। এ সময় নেজারত ডেপুটি কালেক্টর এনডিসি ফরিদুল ইসলামকে দিয়ে হেনস্তা করে সাংবাদিক মোবারক হোসেনকে খবর দেওয়া হয়। পরে বাবা-ছেলের ছবি তুলে রেখে নাজেহাল করা হয়। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেন সাংবাদিক মোবারক হোসেন । বিষয়টি ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের নজরে এলে তা দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয় দেশব্যাপী। ঢাকা পোস্টে সংবাদটি প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার সাংবাদিক মোবারক হোসেন এবং তার ছেলে তাহসিন রাহমানকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে এনে দুঃখ প্রকাশ করে তাহসিন রাহমানের গাছের চারা নেন এবং তাহসিনকে উপহার প্রদান করেন।
উল্লেখিত সংবাদগুলো ছাড়াও কুমিল্লার আরও বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা পোস্টে। যেকোনো রক্তচক্ষু এবং চাপ উপেক্ষা করে অনিয়মের খবর প্রকাশ করতে ঢাকা পোস্ট বদ্ধপরিকর। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পাঠকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
লেখক : আরিফ আজগর, জেলা প্রতিনিধি (কুমিল্লা), ঢাকা পোস্ট
আরএআর