জালিয়াতি করে ৪৮ একর জমির মালিক হন দীপু মনির ভাই টিপু চক্র

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর পশ্চিমে জেগে ওঠা চরের জমির কাগজপত্র তৈরি করে ৪৮.৫২৫ একর জমির মালিক হন সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম টিপুসহ পাঁচজন। এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চাঁদপুর কার্যালয়ে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযোগের আলোকে হাইমচর সাব রেজিস্ট্রার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ব্যাপক অভিযান চালায় দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নীলকমল ইউনিয়নের সোনাপুর, তাজপুর ও বাহেরচর এলাকায় চরের সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে ১৯৭৭-১৯৭৮ সালে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। কারণ জেগে ওঠা এসব চরের জমির কোনো মালিকানা ছিল না। এরপর ১৯৮২ সালে হাতে লেখা জেএল তৈরি হয়। ওই জেএল এর মধ্যে দাগ ও খতিয়ান কিছুই নেই। তখন সরকারের পক্ষ থেকে এসব জমি কৃষকদেরকে আবাদ করার জন্য ব্লক তৈরি করে দেওয়া হয়। ওইসব ব্লকের মধ্যে যারা আবাদ করেছেন তারাই সরকারকে খাজনা দিতেন।
এদিকে জেগে ওঠা এসব চরের জমি দখলের মিশনে নামেন সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম টিপু ও তার চক্রের সদস্যরা। তারা এসব জমিতে যারা এক সময় আবাদ করতেন তাদের ওয়ারিশদের মালিক বানিয়ে ২০১৯ সালে ৪৮.৫২৫ একর জমি সাবকবলা দলিল করে মালিক হন। তারা সেখানে গড়ে তোলেন টিপু নগর।
হাইমচর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, জালিয়াতি করে কাগজপত্র সৃজন করে এসব জমির মালিক হন জাওয়াদুর রহিম টিপু, নীল কমল ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদার, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মুনুসর আহমেদ ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির চাঁদপুর প্রতিনিধি অ্যাড. সাইফুদ্দিন বাবু।
জেগে ওঠা চরে যারা আবাদ করতেন তাদের দেওয়া খাজনার কাগজমূলে এসব দলিল কোনো ধরনের বৈধতা ছাড়া সাবকবলা দলিল সম্পদিত হয়। খাজনার ওই কাগজে উল্লেখ করা হয় শুধু খাজনার জন্য এই রশিদ ব্যবহারযোগ্য। এই রশিদ কোনো মালিকানা নয়।
এরপরেও ২০১৯ সালে ২১ মার্চ ৩২৫ নম্বর দলিলে ১২.৮০ একর, একই তারিখে ৩২৬ নম্বর দলিলে ৮.৭৫ একর, ২৮ মার্চে ৩৮১ নম্বর দলিলে ৪.৮০ একর, ১১ এপ্রিল ৪১৫ নম্বর দলিলে ১০.৯০ একর, ৩০ মে ৫৪০ নম্বর দলিলে (দানপত্র) ৭.৮০ একর এবং ১৮ জুলাই ৬৮১ নম্বর দলিলে ৬.৪৭৫ একর জমি সাবকবলা দলিল সম্পাদিত হয় উল্লিখিত ৫ ব্যক্তির নামে।
দলিলের মধ্যে ৪১৫ নম্বর দলিলের দাতা সালাউদ্দিন, ফিরোজ ইকবাল, ৩১৫ নম্বর দলিলের দাতা আব্দুল ফারুক, আবুল সর্দার, নুর মোহাম্মদ, ৩২৬ নম্বর দলিলের দাতা মাছুম হোসেন সরদার, ৩৮১ নম্বর দলিলের দাতা ফিয়ারা বেগম, আকলিমা বেগম, তাছলিমা বেগম, সুমন মিয়া হৃদয়, ফাহিমা আক্তার, সুলতান, শরীফ মিয়া ও নুর মোহাম্মদ, ৫৪০ নম্বর দলিলে দাতা মো. জয়নাল, ৬৮১ নম্বর দলিলে দাতা মাজেদা বেগম, নাছির, রাসেল, হাছিনা ও সাহিনা আক্তার।
হাইমচর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার আরিফুর ইসলাম বলেন, আমি ২০২৪ সালের জুন মাসে এই কার্যালয়ে যোগদান করি। আজকে দুদকের একটি টিম ছয়টি দলিলের জালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে অনুসন্ধানে আসে। আমি ওই টিমকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এই কাজটি সম্পাদনে আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের জেগে ওঠা চরের জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছয়টি দলিল সম্পাদন হয়। এ বিষয়ে আমাদের কার্যালয়ে অভিযোগ হয়। দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনক্রমে অভিযান পরিচালনা করি। সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কাগপত্র অনুসন্ধান করে দুর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। আরও কাগজপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হবে। প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর পরে নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আনোয়ারুল হক/এএমকে