পাকবাহিনীর লঞ্চ ডুবিয়ে মুক্ত হয় ভোলা

আজ ১০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। ভোলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরুতে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে অবস্থান নেয় পাক হানাদার। ওই ভবনের দুটি কক্ষ টর্চারসেল বানায়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের লাশগুলো গণকবরে দাফন করা হতো।
এছাড়া তেঁতুলিয়া নদীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হতো। অনেক নারীকে ক্যাম্পে ধরে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো।
১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী অগণিত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন ছাড়াই গণকবর দেয়া হয় ওয়াপদার পেছনে। ভোলার দেউলা, বাংলাবাজার এবং দৌলতখানের গুপ্তেরগঞ্জ বাজারে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর পাকসেনাদের মনোবল ভেঙে যায়।
জীবন বাঁচাতে ১০ ডিসেম্বর ভোরে পাকবাহিনী লঞ্চে করে ভোলা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। চাঁদপুরের কাছে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাকসেনাদের বহনকারী লঞ্চটি ডুবে যায়। পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর হানাদার মুক্ত হয় ভোলা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা ভোলার ওয়াপদা পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ঘেরাও করি। আমরা যখন ফায়ার ওপেন করি তখন পাকবাহিনী দ্রুত ইলিয়াছ মাস্টারের কার্গো লঞ্চযোগে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ করলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। এই প্রতিরোধের মধ্যেই তারা পালিয়ে যায়। পরের দিন আমরা ভোলা শহরে রাইফেল উঁচিয়ে আনন্দ মিছিল করি।
ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার বলেন, ৬ তারিখ ভারত স্বীকৃতি দেয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অনেক বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ভোলার চারদিকে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কার্গো লঞ্চযোগে বের হয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পেরে উঠেনি। পাকবাহিনী চাঁদপুর গেলে মিত্রবাহিনীর হামলায় জাহাজটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির নেতা ইলিয়াছ মাস্টারকে আটক করে থানায় দেয়।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এসপি