সাবেক এমপির বিরুদ্ধে যুবককে হত্যার হুমকির অভিযোগ

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে এক যুবককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী যুবক তপন রবিদাস এ অভিযোগ করেন।
এর আগে হুমকির ঘটনায় তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি ) করেছেন। তপন রবি দাস টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ডের স্বর্গীয় নরেশ রবি দাসের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তপন রবি দাস জানান, টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন চৌধুরী শারীরিকভাবে চলাফেরায় অক্ষম। অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে আনা-নেওয়াসহ সব সময় তিনি তার সঙ্গে থাকেন। গতকাল সোমবার (৩১ মে) সকালে স্বপন চৌধুরীকে রিকশাযোগে শহরের রেজিস্ট্রিপাড়ার মেডিকো ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে কলেজপাড়ার হাজী রৌফের বাসার সামনের মোড়ে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা তার প্রাডো গাড়ি দিয়ে রিকশার গতিরোধ করেন। গাড়ি থেকে নেমে সাবেক এমপি রানা তপনকে ধরে আনার জন্য তার সঙ্গী রেজওয়ান খানকে (৩৫) নির্দেশ দেন।
তার নির্দেশ পেয়ে রেজওয়ান খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ রাজিব (৩২), তার ভাই শুভ (২৮) ও চাচাতো ভাই মনছুর মিয়া (২৮) এবং সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলী (৪২) তপনকে ঘিরে ফেলেন। তপন রবি দাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্বপন চৌধুরীর সঙ্গে থাকেন জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে সাবেক এমপি রানা তার লাইসেন্সকৃত রিভালবার বের করে পেটে ঠেকিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইল শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এরপর তপনকে শহরে দেখা গেলে গুলি করে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়ে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে গাড়িতে উঠে চলে যান সাবেক এমপি রানা।
তপন আরও জানান, সাবেক এমপি রানা হুমকি দিয়ে চলে যাওয়ার পর বিষয়টি তিনি স্বপন চৌধুরীর পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানান। পরে তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি জিডি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন চৌধুরী ও টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন।
স্বপন চৌধুরী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা জামিন পাওয়ার পর থেকে তার কলেজপাড়ার বাসায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ঢিল ছোঁড়া ও জানালায় টোকা দেওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, গত ৬-৭ বছর ধরে টাঙ্গাইল শহর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও জমি দখলমুক্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা খুনের মামলায় কুখ্যাত খান পরিবারের সন্তান আমানুর রহমান খান রানার জামিন হওয়ার পর থেকে তিনি আবার টাঙ্গাইল শহরকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন।
এদিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা জানান, তপন রবিদাস নামে কাউকে তিনি চেনেন না। তাকে কোনো দিন দেখেননি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যায় আমানুর রহমান খান রানার জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশি তদন্তে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেরিয়ে হয়ে আসে। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। দুই বছর পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২২ মাস কারাবাসের পর ২০১৯ সালের ৯ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন। ফারুক হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানার ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান এখনো কারাগারে রয়েছেন। তার অপর দুই ভাই পলাতক।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর