নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি
জনআকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে রাজনৈতিক ঐক্যমত ও আস্থার সংকট সৃষ্টি হলে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি আবারও পুরোনো শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রংপুরের সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ। তারা মনে করছেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি সাংবিধানিক কাঠামো দাঁড় করানো দরকার। যার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ হবে জবাবদিহিতামূলক ও জনকল্যাণমূলক একটি বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নগরীর আরডিআরএস ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐক্যমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি আয়োজিত এ বৈঠকে ছাত্র-শিক্ষক, আইনজীবী-সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সমন্বয়কারী রাজেশ দে রাজুর সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুজন নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের আস্থা ফেরাতে আগে রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। আদর্শ, দর্শন ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনে উল্লেখিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারাগুলোকে পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের জোরালো ভূমিকা থাকতে হবে। আর আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সব ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কারের পরামর্শ দেন আগত অতিথিরা।
দিলীপ কুমার বলেন, একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রগঠনে যেসব প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতেই সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে সুজনের পক্ষ থেকে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। এর কারণ সংবিধান, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসশন, দুদকসহ যেসব সংস্কার কমিশন থেকে সংস্কার প্রস্তাবনা এসেছে তার সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বর্তমান সংবিধান থেকে যেগুলো বাদ দেওয়া বা সংযোজন করা দরকার, তা সুধীজনের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতেই যেন করা হবে, সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়।
এ সময় তিনি বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আর চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দুটি আলাদা প্রেক্ষাপট। দুটিকে ধারণ করে আমাদেরকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে, যাতে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবার রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত চন্দ্র খা, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মুনীর চৌধুরী, লালমনিরহাট জেলা সুজন সভাপতি আমিরুল হায়াত আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান লাডলা, সুজন উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শফিকুল ইসলাম কানু, রংপুর মহানগর সুজন সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান, গঙ্গাচড়া উপজেলার সুজন সভাপতি নুরুন্নবী, এনজিওকর্মী মঞ্জুশ্রী সাহা, এনজিওকর্মী এজাজ আহমেদ, প্রভাষক ড. নাসিমা আক্তার, সমাজকর্মী মোশফেকা রাজ্জাক, বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল মেতালেব, অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বুলেট, অ্যাডভোকেট এ এম খায়রুল ইসলাম বাপ্পি, জাতীয় মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাবুবা আরা বেগম, প্রভাষক রুমানা জামান, সাংবাদিক বাবলু নাগ, ফরহাদুজ্জামান ফারুক, আসাদুজ্জামান রিপন, সংগঠক ড. শাহ সুলতান তালুকদার, মাহমুদা চৌধুরী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা শামছি আরা জামান কলি, জেলা সুজনের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, মহানগর সুজনের প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বক্তাগণ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষন করে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আহ্বান জানিয়ে দেশে আইনের শাসন যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে, সে লক্ষে কাজ করা আহ্বান জানান।
এই গোলটেবিল থেকে প্রাপ্ত মতামতগুলো ঐক্যমত্য কমিশনের নিকট বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানায় আয়োজক সংগঠন। যাতে নাগরিক সমাজের মতামত প্রতিফলিত হয় এবং সঠিক মূল্যায়িত হয়।
উল্লেখ্য, এমনই এক আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে নাগরিক সংগঠন সুজন-এর পক্ষ থেকে গত ২০ মার্চ ২০২৫, রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল এবং বিভাগীয় পর্যায়েও গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে