বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিবুলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক হাসিবুল আলমের (২৫) মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলার খারিজা জোংড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক শেষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৮১ নম্বর ও উপপিলার ১৩ এর ভারতের কোচবিহার জেলার থানার শীতলকুচি থানার সীমান্ত ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের খারিজা জোংড়া সীমান্তবর্তী স্থান দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়।
এ সময় ভারতের ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মহেশমারী ক্যাম্পের কমান্ডার রাজ কুমার, শীতলকুচি থানার ওসি ও বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের খারিজা জোংড়া ক্যাম্পের প্রতিনিধি সুবেদার রেজাউল ইসলাম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাজরুল ইসলাম এবং নিহত যুবকের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও চাচা রশিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
রাতে মরদেহ হস্তান্তরের পর তা গ্রামে পৌঁছালে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। স্বজনদের আহাজারি আর কান্নার রোলে ভারী হয়ে ওঠে রাতের নিস্তব্ধতা। মৃত হাসিবুল আলম হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম ডাওয়াবাড়ী এলাকার মছলে উদ্দিনের ছেলে।
এর আগে সন্ধ্যায় এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার দুপুরে হাসিবুল আলমসহ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক হাতীবান্ধা সীমান্তের ৮৯৪ নম্বর প্রধান পিলারের ৬ এস সাব-পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার শীতলকুচি থানার নগর সিঙ্গিমারী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ঘাস কাটতে থাকা বাংলাদেশিদের ধাওয়া করে এবং গুলি ছোড়ে। এতে হাসিনুর গুলিবিদ্ধ হলে বিএসএফ তাকে ধরে ভারতে নিয়ে যায়। পরে কোচবিহার জেলার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিন মরদেহ ফেরত পেতে অপেক্ষা ও উদ্বেগের প্রহর কাটে হাসিনুরের পরিবারের। বুধবার বিকেলে প্রথম পতাকা বৈঠকে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে মরদেহ ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিএসএফ তা পালন করেনি। বিজিবির পুনঃপ্রতিবাদ ও যোগাযোগের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় পতাকা বৈঠক শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুজ্জামান সরকার বলেন, ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ বাংলাদেশের পুলিশ এবং বিজিবির নিকট মরদেহ হস্তান্তর করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাতেই মরদেহ নিহতের বাবা এবং চাচাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন নবী জানান, মরদেহ হস্তান্তরের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসিবুলের নিথর দেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কফিনবন্দি সন্তানের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনেরা। তাদের আহাজারিতে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পুরো গ্রামবাসী সমবেদনা জানাতে ভিড় করেন। এই শোকাতুর পরিবেশেই রাত প্রায় ১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এ ব্যাপারে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৬১ ব্যাটালিয়ন (তিস্তা-২) এর সংশ্লিষ্ট বিজিবি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে ওনারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএ