বাস্তুহারা দল নেতাকে ‘আওয়ামী কর্মী’ পরিচয়ে কারাগারে পাঠাল পুলিশ

জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দল বরিশাল সদর উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে সক্রিয় আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিন দিন পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে ১৬ এপ্রিল নগরীর নতুন বাজার এলাকা থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে তার পরিবারকে জানানো হয় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের দায়েরকৃত দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলায় অজ্ঞাত আসামির মধ্যে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাখাওয়াত হোসেন মনির বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী।
গ্রেপ্তারকৃতের ভাই বাদল সিকদার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে ফাঁড়ির এক এসআই গাড়ি নিয়ে এসে দোকানে বলে ওসি স্যার আপনাকে ডেকেছে। কারণ জানতে চাওয়ায় সে খুব উত্তেজিত হয়ে যায় এবং হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যাবে বলে। পরে সেই এসআইয়ের গাড়িতে চড়ে থানায় গেলে বিকেলে জানতে পারি তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। আমার ভাইতো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগের দায়ের করা মামলায় সে আসামি, জেল খেটেছে। পুলিশ এসে কোনো কিছু বললো না, কি অভিযোগ তাও জানালো না। ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সাজিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিল।
বাদল সিকদার বলেন, সম্পূর্ণ সাজানো ও নাটকীয়ভাবে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।
বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ১নং ওযার্ড বিএনপির সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময়ে আমরা এক সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সাখাওয়াত হোসেন মনির বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তাছাড়া সে উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহ্বায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে পুলিশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী বলে গ্রেপ্তার করেছে এটা দুঃখজনক। ঘটনা জানার পরপরই আমরা পত্রিকায় আমাদের বক্তব্য তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছি। অন্য কারো বিষয়ে বললে সেটি মেনে নেওয়া যেত। সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে আওয়ামী লীগ সাজানোর এই পায়তারা হাস্যকর।
তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন মনির। এ নিয়ে স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। আমরা মনে করি সেই বিরোধের সূত্র ধরে একটি মহল পুলিশকে ব্যবহার করে মনিরকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দল বরিশাল জেলার আহবায়ক মিলন মুন্সী বলেন, সাখাওয়াত হোসেন মনির আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে মামলার আসামি হন। ওই সময়ে বেশ কয়েকবার তিনি কারাবরণও করেন। বিএনপির এই পরীক্ষিত কর্মীতে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে এখন আবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালো। পুরো ঘটনাটি একটি চক্রান্ত। একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য পুলিশ চক্রান্তের অংশ হয়ে বাস্তুহারা দলের নেতাকে আওয়ামী লীগের কর্মী সাজিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় হতবাক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম বলেন, সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে বেড়িয়ে আসবে তার সর্ম্পকে। রাজনৈতিক মামলাটি অনেক বড় একটি মামলা। তবে এটুকু বলব, মামলায় কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।
বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ দেখেছি যে সাখাওয়াত হোসেন মনির আওয়ামী লীগের কর্মী। সে আসলে কোন দলের তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা পেপার পত্রিকায় দেখে তাকে গ্রেপ্তার করেছি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে