ঠাকুরগাঁওয়ে আগুন আতঙ্ক, রাত জেগে পাহারা দিয়েও মিলছে না সুরাহা

ঠাকুরগাঁওয়ে একটি গ্রামে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে ওই গ্রামের মানুষ। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি মধ্যরাতে কে বা কারা এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় দু-এক দিন পর পরই ঘটছে আগুন লাগার ঘটনা। বিশেষ করে সবাই যখন গভীর ঘুমে থাকে তখনই এমনটা ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘণিমহেষপুর এলাকায়। গত তিন মাস ধরেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রামবাসী।
রুহিয়া উত্তরা বাজারের একটি মসজিদের মোয়াজ্জেম হামিদুর রহমান বলেন, গত তিন মাস আগে কাদো রাম নামে একজনের বাসা থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। এ পর্যন্ত একটার পর একটা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। আমরা সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। শেষ গত মঙ্গলবার ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হতেই চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখি তৈমুরের বাসায় আগুন লেগেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই দেখি খরের গাদা ও খড়ির ঘর পুরে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয় তার।
তৈমুর রহমান বলেন, লোকজন যখন ঘুমিয়ে পরে ঠিক তখনই এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীদের এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে আমাদের অনেক কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তৈমুরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, সারাদিন মাঠে কৃষি কাজ করে এভাবে রাত জেগে পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এটা আমাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এটা জিন-ভূতের কাজ না, এটা মানুষেরই কাজ। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ভয়ে রাতে ঘরে থাকছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় সময় গ্রামের বিভিন্ন জনের ঘরে আগুন লাগে। কিন্তু আগুনটা কে ধরিয়ে দিচ্ছে তা এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আমরা গ্রামবাসীরা মিলে একটা বৈঠক করি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিই এরপর থেকে রাতে আমরা ঘরবাড়ি পাহারা দেবো। যাতে নতুন করে কেউ আর আগুন দিতে না পারে। বেশ কয়েকদিন রাত জেগে পাহারা দেওয়ার পর ঘরে আগুন দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর তা আবারও ঘটছে নিয়মিতভাবে। আমাদের বাচ্চারা এখন ঘরে থাকতেই ভয় পায়। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থানায় মৌখিক অভিযোগ করলে থানা থেকে পুলিশ এসে উলটো আমাদেরকেই বলে দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়ে দিতে।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া একই গ্রামের কাদো রাম, খোরশেদ, মকবুল, দারাজ উদ্দিন, শহিদুলসহ প্রায় ১৫ জনের গত তিন মাসে প্রায় ১৫-১৬টি খড়ের গাদা, গোয়াল ঘর ও রান্না ঘরে আগুন লাগে। ফলে আগুন আতঙ্কে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে। তবে আগুন কে দিচ্ছে, তা রাত জেগে পাহারা দিয়েও তাদের ধরতে পারছেন না গ্রামবাসী।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নাজমুল কাদের বলেন, রুহিয়া ঘনিমহেষপুর গ্রামে ঘর-বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা শুনেছি। এঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় একটি মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে