ভিক্ষার টাকা মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন জবেদা

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন জবেদা বেগম (৮০)। প্রতিদিন ভিক্ষা করেই সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি। শরীরে নানান রোগে বাসা বাঁধায় এখন আর ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে পারেন না তিনি। তাইতো সপ্তাহে আশপাশের হাটগুলোতে ভিক্ষা করেন তিনি। যা পান, তা থেকে কোনোরকম পেট চালিয়ে বাকিটা সঞ্চয় করে রাখেন।
সঞ্চয়ের টাকা নিজের জন্য খরচ না করে দান করেন মসজিদ-মাদরাসায়। ভিক্ষার টাকা জমিয়ে পাড়ার মসজিদে ছাদ দেওয়ার জন্য তিনি দান করেছেন ১৩ হাজার টাকা। সেই থেকে গ্রামে আলোচিত তিনি। প্রমাণ করেছেন, দান করতে বিত্তশালী হওয়া লাগে না, লাগে সুন্দর একটি মন।
জানা গেছে, জবেদা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাগডাঙা গ্রামের মৃত চিনেতুল্লা বিশ্বাসের স্ত্রী। ২৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান চিনেতুল্লা। বেঁচে থাকতে তিনিও ভিক্ষা করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন জবেদা। বৃদ্ধার পাঁচ মেয়ে, ছেলে নেই। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন।
ছোট মেয়ে শাহানারা খাতুন স্বামী পরিত্যক্তা হন। নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে আফরোজা খাতুনকে নিয়ে আছেন বাপের ভিটায়। মায়ের সংসারে থেকে জুটমিলে কাজ করেন শাহানারা। জবেদা বেগমের দানের বিষয়টি আনেকদিন গোপন ছিল। চলতি বছরের (১ জানুয়ারি) গ্রামের নামে ‘প্রিয় বাগডাঙা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বৃদ্ধার ছবিসহ তার দানের বিষয়ে একটি পোস্ট দেয় স্থানীয় এক যুবক। তখন ঘটনাটি জানাজানি হলে যশোরে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
কয়েকমাস আগে পাড়ার বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার, বাগডাঙা বাজার মসজিদে ১ হাজার, দহকুলা মসজিদে ১ হাজার, মাছনা মাদরাসায় ১ হাজার ও পাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভায় ৫০০ টাকা দিছি। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় না, মন চাইছে, তাই দান করিছি। আমারে আল্লাহ দেবে।
বৃদ্ধ জবেদা বেগম
প্রতিবেশী আব্দুর জব্বার বলেন, মসজিদ পাকা ও ছাদ দেওয়ার জন্য আমরা যখন গ্রামভিত্তিক টাকা তুলছিলাম তখন ভিক্ষুক জবেদা সহযোগিতার হাত বাঁড়ান। তিনি নিজে এসে বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার ও দহকুলা মসজিদে ১ হাজার টাকা দিয়ে যান। তা দেখে আমরা উৎসাহিত হই। দ্রুত মসজিদ সংস্কারের কাজ এগিয়ে যায়। তার সেই টাকা দিয়ে সিমেন্ট কেনাও হয়েছে।
সবুর হোসেন নামে স্থানীয় কলেজছাত্র বলেন, স্বামীর রেখে যাওয়া পাঁচ শতক ভিটেতে মাটির ঘরে বসবাস জবেদার। বিধবা ভাতাছাড়া সরকারি কোনো সুবিধা পান না তিনি। বিধবা মেয়ে ও এক নাতনিকে নিয়ে কষ্টের সংসার বৃদ্ধা জবেদা বেগমের। ভিক্ষা করে পেট চলে তার।
জবেদার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে শাহানারার নামে একটি চালের কার্ড ছিল। একবার চাল তোলার পর স্থানীয় এক মহিলা ইউপি সদস্য তার নাম কেটে দিয়েছেন। করোনাকালীন এক ভিক্ষুক সরকারি ঘর পেয়েছেন। আমরা চাই ভিক্ষুক জবেদাও যেন সরকারি সহায়তা পায়। তাকে যেন শেষ বয়সে আর ভিক্ষা করতে না হয়।
খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। টাকা জমিয়ে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন তিনি।
জবেদা ও তার মেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো সরকারি সহযোগিতা পায় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানামতে সব ধরনের কার্ড তারা পেত। বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, জানা নাই। কাগজপত্র দেখতে হবে। তবে, জবেদা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য। আমরা চাই তিনি যেন সরকারি ঘর পায়। সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকের কল্যাণে বিষয়টি আমিও জানতে পেরেছি। ভিক্ষুক জবেদা তার ক্ষুদ্র দান দিয়ে সবার চোখ খুলে দিয়েছেন। এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা প্রশাসন তাকে সব ধরনের সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার টেষ্টা করবে।
এমএসআর