আমরণ অনশনে কুয়েট শিক্ষার্থীরা, ভিসির পদত্যাগ দাবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে তারা অনশনে বসেন।
এদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ড. এম এ রশীদ হলের সামনে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে তারা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে তোশক, বালিশ, বিছানার চাদর নিয়ে বসে পড়েন। আগে থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ অনেক শিক্ষক অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীরা ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আসার পর আন্দোলনকারীদের কাছে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা কেন উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফার চূড়ান্ত দাবিতে গেলেন, তা শিক্ষকদের ব্যাখ্যা করেন। এরপর শিক্ষকরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এক দফা দাবি পূরণে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সোমবার দুপুর ৩টায় শেষ হয়। এর আগে, রোববার দুপুর আড়াইটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈকত এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইইএম) বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী উপল ভিসির পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
আরও পড়ুন
সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান সংকট আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার, সহকারী ছাত্র কল্যাণ পরিচালক রাজু আহমেদ ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফুল গনি ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র কল্যাণ পরিচালকরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আলোচনার টেবিলে বসুন, আলোচনা করুন, আশা করি সমস্যার সমাধান হবে। এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে। আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করলেও আমরণ অনশন কর্মসূচিতে থেকে সরে না এসে অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। বুধবার দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মিছিলের পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিপক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবার বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেন।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে