জুলাই হত্যা মামলার আসামি থানার পরিদর্শক, কর্মস্থলে নেই ৬ দিন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছয় ব্যক্তির মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শরীয়তপুরের পালং মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান। তিনি ছুটি না নিয়ে গত ছয় দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কোথায় আছেন জানেন না তার সহকর্মী ও পুলিশের কর্মকর্তারা।
গ্রেপ্তার এড়াতে মাসুদুর রহমান গত ২৪ এপ্রিল থেকে পালং মডেল থানায় অনুপস্থিত রয়েছেন বলে ধারণা সহকর্মীদের।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদ হোসেন সজল, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, আস-সাবুর ও বায়েজিদ নামে ছয়জন নিহত হন। ওই দিন আশুলিয়া থানার সামনেই পুলিশের ভ্যানে নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম বাদী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার ২৭ নম্বর আসামি করা হয় মাসুদুর রহমানকে। তিনি তখন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর মাসুদুর রহমানকে শরীয়তপুর জেলা পুলিশে বদলি করা হলে তিনি গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর পুলিশে যোগদান করেন। যোগদানের পর শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমানকে গত ১২ ডিসেম্বর পালং মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে পদায়ন করেন।
সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগমের দায়েরকৃত মামলাটি গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকার দুই নম্বর সিরিয়ালে ছিল। গত সোমবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর গ্রেপ্তার হতে পারেন- এমন ভাবনা থেকেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মস্থলের কাউকে না জানিয়ে ছুটি না নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থানা থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেননি মাসুদুর রহমান।
মাসুদুর রহমানের সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে জানার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৪ এপ্রিল থেকে পরিদর্শক মাসুদুর রহমান থানায় অনুপস্থিত। গত ২৪ তারিখ তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন, তা আমরা জানি না। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মো. তানভির হোসেন বলেন, মাসুদুর রহমান কোথায় আছেন তা আমরা জানি না। তিনি জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কোনো মামলার আসামি কিনা তাও বলতে পারছি না। পুলিশ হেডকোয়ার্টার হতে বা কোনো আদালত হতে এ সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র আমাদের কাছে আসেনি।
সাইফ রুদাদ/আরএআর