ভূমিকম্প, বড় ধরনের বন্যা ও বৃষ্টিপাতের আগাম তথ্য পাওয়া যাবে

রংপুরে নবনির্মিত ডপলার রাডার স্টেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে। রোববার (১১ মে) দুপুরে রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারে স্থাপিত ডপলার রাডার স্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন।
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরামর্শদাতা ইয়োশিহিসা উচিদা এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের উপ-পরিচালক আহমেদ আরিফ রশিদ। সভাপতিত্ব করেন রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান।
এটি উদ্বোধন হওয়ার মধ্য দিয়ে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ আবহাওয়ার আগাম তথ্য জানার নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল। কৃষিনির্ভর উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রতিবছর ব্যাপক হারে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে আসছিল এ অঞ্চলের মানুষ। নতুন এই রাডার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কয়েক ঘণ্টা আগে তথ্য দিতে পারবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ডপলার রাডার কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে করে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ থাকায় দুর্যোগে কমবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর কলেজ রোড মাস্টারপাড়া এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীনে আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়। আড়াই একর জমির ওপর নির্মিত এ আবহাওয়া কেন্দ্রে জাপান সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কনভেনশনাল রাডার স্থাপন করা হয়। রাডারটির আয়ুষ্কাল ছিল ১০ বছর। কিন্তু ২০০৭ সালে রাডারে ত্রুটি ধরা পড়ে। স্থানীয় প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় ২০১২ এটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।
২০১৬ সালে এটি স্থাপনে কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে যায়। রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মার্চে। জাপান সরকারের অনুদানে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও পরে প্রকল্প ব্যয় ১৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার বেশি অংশই দিয়েছে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা। ডপলার রাডার স্থাপনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছে জাপানের সিমিজু করপোরেশন। এই রাডার স্টেশনের সরঞ্জাম সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি করপোরেশন।
আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম বলেন, নতুন এ রাডার স্টেশনের মাধ্যমে মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা জানা ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। রেড জোনে অবস্থিত রংপুরে ভূমিকম্প, বড় ধরনের বন্যা ও আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। রংপুরের আবহাওয়ার অবস্থা ও পরিবর্তনজনিত কারণগুলো গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরামর্শ দাতা ইয়োশিহিসা উচিদা বলেন, ডপলার রাডার কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটির মাধ্যমে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ আগাম আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল। এই ডপলার রাডারের মাধ্যমে বিমান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কাজ করবে।
রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন রাডার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কয়েক ঘণ্টা আগের তথ্য দিতে পারবে। এতে করে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ থাকায় দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস