মানিকগঞ্জে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে বসতবাড়ি-ফসলি জমিসহ ৬৪ স্থান

পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও গাজীখালীসহ ১৪টি নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জ জেলা। শুষ্ক মৌসুমে এসব নদী পাড়ের মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করলেও বর্ষার শুরুতেই পড়তে হয় ভাঙন আতঙ্কে। বর্ষা মৌসুমে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হলে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন নদীপাড়ের শত শত পরিবার।
জেলার নদীর তীরবর্তী এলাকার ৬৪টি স্থান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থানে জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নদী ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্ষা শুরুর আগেই নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই ব্যবস্থা নিলে নদীভাঙন রোধ করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চর কালিয়াপুর, বাঘুটিয়া, ভারাঙ্গা, রংদারপাড়া, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর, আবুডাঙ্গা পূর্বপাড়া, চরকাটারি বোর্ডঘর বাজার, চরকাটারি সবুজসেনা হাইস্কুল, বাচামারা উত্তরখন্ড, সুবুদ্ধি পাচুরিয়া, বাঘুটিয়া বাজার, পারুরিয়া বাজার, রাহাতপুর, বৈন্যাঘাট, লাউতাড়া, লাউতাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র, চকবাড়াদিয়া, ভাঙা রামচন্দ্রপুর, রামচন্দ্রপুর নতুন পাড়া, চরমাস্তুল, হাতখোড়া, বিষ্ণপুর খাঁপাড়া, পাড় মাস্তুলসহ ২৮টি এলাকা নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে সাটুরিয়া উপজেলার সনকা, পশ্চিম চর তিল্লী, আয়নাপুর, তিল্লী বাজার, পূর্ব সনকা, বরাইদ, ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া, মির্জাপুর মাঝিপাড়া, নকিববাড়ি, বড়টিয়া, পূর্ব ঘিওর। এ ছাড়া সদর উপজেলার বালিরটেক, চর বালিয়াবিল, চৈল্লা, পুটাইল, গড়পাড়া এলাকায় নদীর পানি বাড়লে ভাঙন বেড়ে যাবে।
হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, কাঞ্চনপুর, সেলিমপুর, সুতালড়ি, হাতিঘাটা, মালুচি, গোপীনাথপুর উজানপাড়া, আন্ধারমানিক, সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ জামশা, বালুরচর জামশা, দক্ষিণ চারিগ্রাম, বার্তা বাজার, শিবালয় উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেওতা, তেওতা সমেজঘর, নেহালপুর, আরুয়া, আলোকদিয়া এলাকাও রয়েছে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।
বাঘুটিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তালেব মিয়া বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করছে, লগে ভাঙনও শুরু হইতাছে। নদীর পাড়ে বাড়ি থাকায় সবসময় ভয়ে থাকি। কখন যেন বাড়িঘর যমুনার পেটে চলে যায়। বাপ-দাদার কাল থেকে আমার পর্যন্ত নদী ভাঙনের কারণে বাড়িঘর সরাতে সরাতে চলে গেল। পরিবার নিয়ে এক জায়গায় থাকতেই পারলাম না। এ বছরই মনে হয় নদী ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি সরাতে হবে।’
আরিচা নেহালপুল এলাকার মাসুদ খান বলেন, 'প্রতি বছর ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থাপনা যমুনায় বিলীন হচ্ছে। ভিটেমাটি হারিয়ে মানুষজন অসহায়ভাবে দিন পার করছে। নদী ভাঙন শুরু হলে কর্তৃপক্ষ ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফালায়, কিন্তু তাতে ভাঙনরোধ হয় না। স্থায়ীভাবে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলে এই এলাকার লোকজনের অনেক উপকার হতো।’
আরও পড়ুন
হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বাসিন্দা সেন্টু মিয়া বলেন, ‘যার বাড়িঘর নদীতে গেছে, সেই কেবল বুঝে নিঃস্ব হওয়ার কি কষ্ট। চোখের সামনে নিজের কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে বানানো ঘরবাড়ি এক নিমিষেই শেষ করে দিচ্ছে সর্বনাশা পদ্মা। আমাগো একটাই দাবি, পদ্মার ভাঙন থেকে আমাগো বাঁচান। আর ঘরবাড়ি ভাঙনে কিছুই থাকবো না আমার। একটা বেড়িবাঁধ দিলে খুব উপকার হইতো।’
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চলমান রয়েছে ও কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহ অনুমোদন হলে নদী ভাঙনের হাত থেকে জেলার নদীপাড়ের মানুষ রক্ষা পাবে বলে তিনি জানান।
সোহেল হোসেন/এএমকে