ছেলেকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিলেন মা

নাম ধ্রুবব্রত দাস। বয়স মাত্র ১৮। স্বপ্ন দেখার সময় ছিল এটা, স্বপ্ন থেমে যাওয়ার নয়। বাবা-মায়ের একটা স্বপ্ন ছিল—ছেলেকে দিয়ে মানুষের সেবা করাবেন। সাদা অ্যাপ্রোন পরা ছেলেটি একদিন ডাক্তার হয়ে যখন রোগী দেখবে, তখন বুক ভরে উঠবে মায়ের। সেই স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশিয়ে গেল!
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে গাইবান্ধায় ধ্রুবর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মরদেহ আনার পর থেকেই মধ্যপাড়ায় ধ্রুবর বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ঢাকা থেকে আনা হয়েছে তার নিথর দেহ। মা তমা রানী সিং এখনো বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। চোখে-মুখে শোকের ছায়া, আর কণ্ঠে ভেঙে পড়া স্বপ্নের প্রতিধ্বনি। ‘ছেলেটা এত ভালো ছিল। নম্র, ভদ্র, পড়ুয়া ছিল খুব। একদিনও কারো সঙ্গে ঝগড়া করেনি। ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম আমরা, সেই আশায় ওকে ঢাকায় ভর্তি করাই। ভাবিনি, এভাবে শেষ হবে সব।’
গাইবান্ধা সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছিলেন ধ্রুব। তারপর ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসি পরীক্ষা ছিল সামনে। সোমবার বাবার সঙ্গে কলেজে গিয়ে টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট আনছিলেন। বিকেলে কলেজ ভবন থেকে নিচে পড়ে যান ধ্রুব। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ।
প্রিয় ছেলেটিকে হারিয়ে কেবল প্রশ্নবিদ্ধ মা নয়, পুরো পরিবার হতভম্ব। মৃত্যুকে এখনো দুর্ঘটনা বলে মানতে পারছেন না তারা।
আরও পড়ুন
বাবা বাণীব্রত দাস চঞ্চল বলেন, ‘ও তো শুধু পড়ালেখা নিয়েই থাকত। কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল না। আত্মহত্যা করবে, এমন কোনো লক্ষণও ছিল না। তাই এখনো আমাদের মনে হাজারটা প্রশ্ন। ও কি সত্যিই পড়ে গেছে, নাকি কাউকে দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে?’
কলেজের বন্ধুরা কেউ কথা বলছেন না—চোখে কেবল অশ্রু। অনেকেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। ধ্রুবর ব্যবহারে এতটুকু অহংকার ছিল না, এমনটাই বলছেন তারা। গাইবান্ধার মধ্যপাড়ার ঘরে এখন শুধু একটাই শব্দ—কেন? কেন এমন হলো? কেন ভেঙে গেল মা-বাবার সব স্বপ্ন?
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে নটরডেম কলেজের ‘ফাদার টিম’ ভবন থেকে নিচে পড়ে যায় ধ্রুব। পরে তার সহপাঠীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিপন আকন্দ/এএমকে