ঠাকুরগাঁও সরকারি হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের টিকা, বিপাকে রোগীরা

জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার সংকট দেখা দিয়েছে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে মার্চ মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া এক হাজার ডোজ টিকা এপ্রিলেই শেষ হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ চড়া দামে বাইরে থেকে কিনছেন। কেউ আবার টিকা না পাওয়ায় ভুগছেন দুশ্চিন্তায়।
গত কয়েক মাসে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে আসা রোগীর হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিদিন আসেন ৩১ জন। তবে মে মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ জনে। প্রতিদিন বহু রোগী টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি হাসপাতালটির টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, টিকা নিতে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অধিকাংশই এসেছেন জলাতঙ্কের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ডোজ নিতে। কেউ কেউ প্রথম ডোজ হাসপাতাল থেকে নিয়েছেন, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসে দেখে টিকা নেই।
চিকিৎসকেরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে ডোজ না নিলে আগের টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
টিকা নিতে আসা মালেকা বেগম বলেন, গত সপ্তাহে আমার ছেলেকে কুকুরে কামড় দেয়। প্রথম ডোজটা এখান থেকেই পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় ডোজের জন্য আসলাম কিন্তু টিকা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাইরে থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। দোকানদারেরা কখনো কখনো ৮০০ টাকাও নেন। আর দিনমজুর শফিকুল ইসলাম বলেন, শিয়ালের কামড়ে ডান পায়ে গভীর ক্ষত হয়েছে। ডাক্তার ইমিউনগ্লোবুলিন টিকা লিখে দিয়েছেন। দাম এক হাজার টাকা। এত টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৩১ জন এ টিকা নেন। তবে মে মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ জনে। মার্চ মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া এক হাজার ডোজ এপ্রিলেই শেষ হয়ে গেছে। ইমিউনগ্লোবুলিন ভ্যাকসিন এখনো আসেনি।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মাসুদা খাতুন বলেন, প্রতিদিন নতুন রোগী আসছেন, কিন্তু সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারি না।
টিকাকেন্দ্রের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স লুবানা আক্তার বলেন, প্রতিদিন বহু রোগী টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ আমাদের হাতে কিছুই নেই।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মনজুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় প্রতি মাসে র্যাবিস ও ইমিউনগ্লোবুলিন মিলিয়ে অন্তত ৫ হাজার ডোজ টিকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ আসে মাত্র ২০০-২৫০টি যা কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, নতুন করে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত টিকা পাওয়া যাবে।
রেদওয়ান মিলন/আরকে