পায়ে লিখে স্নাতক পাস, রাজিয়ার আকুতি শুধু একটা কাজ চাই

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের মিস্ত্রি পাড়া গ্রামের দিনমজুর ফয়জুল হক ও রহিমা বেগম দম্পতির মেয়ে রাজিয়া খাতুন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাজিয়া। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাতই প্রায় অকেজো, কিন্তু সে দারিদ্র্য আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানতে দেয়নি।
চার ভাই কেউই প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি, অথচ রাজিয়া একাই পায়ে লিখে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক পাস করেছেন।
বলা যায়, দুই হাতই প্রায় অকার্যকর। আঙুলগুলোও খাটো, বাঁকা-নড়াচড়ার শক্তিও নেই তেমন। কিন্তু রাজিয়া দমে যাননি একটুকুও। পায়ের আঙুলের সাহায্যে কলম ধরে একে-একে এসএসসি, এইচএসসি গণ্ডিয়ে স্নাতক ও মাস্টার্সও পরিক্ষা দিয়েছেন।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও শহরের আইনজীবী সমিতির পাশের একটি টেবিলে বসে পায়ে কলম ধরে চাকরির আবেদন লিখছিলেন তিনি। একটি চাকরি-এটাই এখন তার একমাত্র চাওয়া। যে কোনো হলেই হবে।
২০২৩ সালে রাজিয়া খাতুন বিয়ে করেন একই এলাকার দিনমজুর আবু সুফিয়ানকে। সংসারে আসে এক কন্যাসন্তান। এখন তার বয়স তিন ছুঁইছুঁই। অভাবের সংসার হলেও ভালোবাসায় গড়ে উঠেছিল একটি ঘর। কিন্তু কয়েক মাস আগে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন তাঁর স্বামী সুফিয়ান। এখন আর আগের মতো শ্রম দিতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চাকরির আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন রাজিয়া।
জেলা প্রশাসক তাকে স্বামীর জন্য একটি ভ্যান বা দোকানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও রাজিয়া চান নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি। বলেন, “কয়েকটি কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। লিখিত ভালো হয়েছিল। কিন্তু সামনাসামনি গিয়ে আমার শারীরিক অবস্থা দেখে আর ডাকে না। খুব অপমান বোধ হয়। শুধু একটু সুযোগ চাই, যাতে প্রমাণ করতে পারি, আমিও পারি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি হাত দিয়ে কিছু করতে পারি না, কিন্তু মন দিয়ে সবকিছু করতে পারি। শুধু একটি কাজ চাই, যাতে পরিবারটা বাঁচে।”
স্বামী আবু সুফিয়ান বলেন, রাজিয়া শুধু আমার স্ত্রী না, আমার অনুপ্রেরণা। সে পায়ে রান্না করে, ঘর সামলায়, সন্তানকে দেখাশোনা করে। সরকারের কাছে অনুরোধ, রাজিয়ার জন্য যেন একটি চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়।
প্রতিবেশী মাজেদ বলেন, মেয়েটি অসম্ভব মেধাবী ও পরিশ্রমী। ওর মতো মানুষকে সহায়তা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আল মামুন জীবন নামে এক সংবাদকর্মী বলেন, রাজিয়া ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ। সে যে সাহস আর অধ্যবসায় নিয়ে পায়ে লিখে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে, তা সমাজে বিরল। এমন শিক্ষিত প্রতিবন্ধী নারীর জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
রেদওয়ান মিলন/এসএমডব্লিউ