ছাত্রাবাসে ৫ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে নির্যাতন, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

গোপালগঞ্জের পাঁচ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে নির্যাতন ও ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মাগুরা পৌর এলাকার সাজিয়াড়া গ্রামের একটি ছাত্রাবাসে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। ওই পাঁচ ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাত জনের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার (২৮ মে) দিবাগত রাতে মাগুরা সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা পৌরসভার সাজিয়াড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে এসএম ছাত্রাবাস থেকে ওই পাঁচজন ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানজেল হোসেনের বড় ভাই রফিকুল ইসলামের ছেলে ইসতিয়াক আহম্মেদ শান্তকে আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়া পাঁচ ব্যবসায়ী হলেন- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের রাজীব সরদার (২৪), হৃদয় সরদার (২১), বাবু শেখ (২৪), ওসমান শেখ (২৪) ও রিয়াদ ইসলাম (২৩)।
তারা জানান, গত ২১ মে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রি করতে মাগুরায় আসেন পাঁচ ব্যাবসায়ী। তারা সাজিয়াড়া এলাকায় এমএস ছাত্রাবাসের দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই এলাকার ইশতিয়াক আহমেদ শান্তসহ ৮-১০ জন তাদের জিম্মি করে নির্যাতন চালান। তাদের মারধরের পাশাপাশি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে তাদের বাড়িতে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাবু শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদেরকে আটকে রেখে রাতে গান বাজিয়ে মারধর করে ভিডিও ধারণ করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। সকাল হলে আলাদা আলাদা ঘরে আমাদের বন্দি করে রাখে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, মহসিন নামে এক প্রবাসী ওই ছাত্রাবাসটির মালিক। তার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুরে। হুরাইরা নামে সাজিয়াড়া গ্রামের একটি ছেলের মাধ্যমে তিনি ছাত্রাবাসটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর ইসতিয়াক আহমেদ শান্ত ছাত্রাবাসে বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে সেটির বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দখলে নেন। পরে নিয়মিত দিনে এবং রাতের বিভিন্ন সময়ে সেখানে বন্ধুদের নিয়ে মাদকের আড্ডা বসিয়ে আসছিলেন।
মাগুরা সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যবসায়ীদের আটকে রেখে মারধর করার ভিডিও তাদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চার যুবককে পাশাপাশি দেওয়ালের দিকে দুহাত উঁচু করে একজন লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে খবর পেয়ে সাজিয়াড়া গ্রামের ওই ছাত্রাবাস ও এর পাশে মো. মহসিনের বাড়ি থেকে তালা ভেঙে ওই পাঁচ ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই গ্রামের ইশতিয়াক আহমেদ শান্তর বাড়ি থেকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। পরে এমএস ছাত্রাবাস থেকে মাদক সেবনে ব্যবহৃত ফয়েল পেপার, কলকে, নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে সেনাবাহিনী।
মাগুরা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাত জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
তাছিন জামান/আরএআর