দুই দিনেও খোঁজ মেলেনি পুলিশ সদস্য সাইফুলের

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনও খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ পুলিশ সদস্য মো. সাইফুল ইসলামের (৩০)। এ ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরিবার ও সহকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে শোক আর উৎকণ্ঠা।
নিখোঁজ সাইফুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার চরশাহী গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম ও রহিমা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন। পেশাগত দায়িত্বে গত তিন বছর ধরে নোয়াখালীর বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন সাইফুল।
জানা যায়, গত শনিবার (৩১ মে) দুপুর ৩টার দিকে ভাসানচর থেকে হাতিয়ার করিমবাজার ঘাটে যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবচরে পৌঁছালে হঠাৎ ফেটে গিয়ে উল্টে যায়। ট্রলারটিতে ৩৯ জন যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে মাঝি ও যাত্রীসহ মোট ৩৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে গিয়াস উদ্দিন এবং রামগতি থেকে রোহিঙ্গা নারী হাসিনা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও পুলিশ সদস্য সাইফুলসহ দুইজন নিখোঁজ। প্রচন্ড স্রোতের মধ্যে সাইফুল ভেসে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া আব্দুর রহিম মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ট্রলার নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে মাঝিসহ ৩৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করি এবং গিয়াস উদ্দিন নামের একজনকে মৃত উদ্ধার করি। শিশুসহ রোহিঙ্গা নারী ও পুলিশ সদস্য সাইফুল নিখোঁজ ছিল। গতকাল রোহিঙ্গা নারীর মরদেহ উদ্ধার হলেও শিশু ও সাইফুল ইসলাম এখনো নিখোঁজ।
ট্রলারের চালক মাঝি জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মালামাল নিয়ে সকালে নোয়াখালী থেকে ভাসানচর গিয়েছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়, তারপর ট্রলারে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রলারটি উল্টে যায়। আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা নদীতে ভেসে ছিলাম।
সাইফুল ইসলামের মা রহিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সন্তানকে আমার কোলে আইনা দেন। আমার বাপজান কই। কেউ আমারে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। আমি আমার বাপজানকে চাই। আমার বাপজানকে আইনা দেন। ঈদের ছুটিতে বাপজানের বাড়ি আসার কথা ছিল। সাত দিনের ছুটিও পাইছিল। আমার বাজানরে আইনা দেন।
সাইফুলের সহকর্মী রায়হান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাইফুল ব্যাচের মধ্যে সবার থেকে আলাদা ছিল। খুবই আন্তরিক, দায়িত্ববান ছিল। এলাকায়ও সে সবার প্রিয় ছিল। তার ভেতরে সব সময় মানবিকতা কাজ করতো। সম্ভবত সে রোহিঙ্গা শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্বল হয়ে ভেসে গেছে। আমরা দোয়া করি, সে যেন সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, সাগরে একটি মরদেহ ভেসে উঠেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। বিষয়টি কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। এখনো আমাদের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য আসেনি। বিস্তারিত জানতে পারলে আপনাদের জানানো হবে।
হাসিব আল আমিন/আরকে