খুলনায় চাহিদার শীর্ষে ছোট গরু, দামও বেশি

আর মাত্র এক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত জোড়াগেট কোরবানির পশুর হাট। দূর-দূরান্ত থেকে শহরের এই হাটে এসেছে কোরবানিযোগ্য পশু। ব্যাপারী ও খামার মালিকরা নিয়ে এসেছেন ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের গরু। সঙ্গে রয়েছে ছাগল-ভেড়া। হাটে উঠেছে দুম্বাও।
হাটে ছোট সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। তাই দামও বেশি হাঁকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে মাঝারি ও বড় সাইজের গরু বেশি থাকলেও ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কেসিসির হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও অ্যাস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন জানান, গত রোববার হাট শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হাটে ১ হাজার ২০২টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬৪টি গরু, ৩৩৩টি ছাগল ও ৪টি ভেড়া বিক্রি হয়েছে। কেসিসির রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১ লাখ ৭ হাজার ৭৫৮ টাকা। অন্য বছরের তুলনায় এবার পশু বিক্রির হার বেশি। এছাড়া নগরবাসীর কথা চিন্তা করে এ বছর হাসিল এক শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাটে ছোট-বড় সব সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে। এবার গরু-ছাগলের পাশাপাশি দুম্বাও উঠেছে। এখানে তুলনামূলক বড় গরু বেশি। আর নড়াইল জেলার কালিয়ার বেশিরভাগ খামারি এই হাটে গরু আনেন। তারা সবই দেশি গরু লালন-পালন করেন। এ জন্য ছোট গরুর চাহিদা বেশি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) নগরীর জোড়াগেট পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে হাটে গরু বেশি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। তবে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে গরু এবং হাটের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে এবার ছোট সাইজের গরু ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৭০/৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের গরু ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম কম। বড় গরু কেনার ক্রেতা কম থাকায় তেমন দামও পাচ্ছেন না। তবে ছোট সাইজের গরুর দাম তুলনামূলক বেশি।
নগরীর গগনবাবু রোডের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, গরু কিনতে এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার ছোট সাইজের গরুর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে দুই লাখ টাকার ওপরে গেলে দাম কিছুটা কম। যেটা পছন্দ হচ্ছে তার দাম বেশি চাচ্ছে। তবুও ঘুরে ঘুরে দেখছি, পছন্দ আর সঠিক দাম পেলে কিনব ইনশাআল্লাহ।
নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, হাট ঘুরে দেখলাম। হাট শেষ পর্যায়ে। এবার গরুর চেয়ে হাটে ক্রেতার সংখ্যা কম দেখছি।
একই এলাকা থেকে আসা তাছিন বলেন, গরু ঘুরে ঘুরে দেখছি। গত দুই বছরের তুলনায় এবার বড় গরুর দাম বেশি।
জোড়াগেট হাটে গরু বিক্রি করতে আসা নড়াইল কালিয়ার খামারী আকবর মল্লিক বলেন, বুধবার মাঝারি সাইজের ৬টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। ক্রেতা তেমন নেই। ৬টি গরুর মধ্যে মাত্র একটি গরু ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। আর যে ক্রেতারা আসছে দাম কম বলছেন। বাছুর কিনে এখন পর্যন্ত গরুর পেছনে ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ গরুর দাম উঠছে না। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের গরুর দাম ক্রেতারা ৮০ হাজার টাকা বলছেন। এবার লোকসানে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কালিয়া থেকে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, ১০টি গরু এনেছি। যারমধ্যে ৬টি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা এবার কম।আশা করছি আজ রাতে জমে উঠবে। কিছু লোক আসলেও দাম কম বলছেন। এছাড়া তেমন দাম পাচ্ছি না। তাই গরু সামান্য লাভে ছেড়ে দিচ্ছি।
আরও পড়ুন
খুলনার ডুমুরিয়া শাহাপুর থেকে গরু নিয়ে আসা আসিফ মোল্লা বলেন, ৬টি গরু নিয়ে বুধবার এসেছি। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ৮ মণ ওজনের একটি গরু বিক্রি করেছি ২ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এবার সেইভাবে বেচা বিক্রি তেমন নেই। দামও সেভাবে পাচ্ছি না।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১৬৯টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ১২০টি এবং অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৪৯টি। হাটগুলোর মধ্যে খুলনায় ২২টি, বাগেরহাটে ৩৩, সাতক্ষীরায় ১৫, যশোরে ১৯, ঝিনাইদহে ২২, মাগুরায় ১৯, নড়াইলে ৮, কুষ্টিয়ায় ১৭, চুয়াডাঙ্গায় ৮ এবং মেহেরপুরে ৬টি হাট স্থাপন করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: শরিফুল ইসলাম জানান, সাধারণত দুই মণ ওজনের গরু ছোট আকারের। দুই থেকে তিন মণ ওজনের গরু মাঝারি এবং এর ওপরের ওজনের গরু বড় আকারের। খুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। জোগানও রয়েছে।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর