গভীর রাতেও ময়মনসিংহ বাইপাসে ঘরমুখো মানুষের স্রোত, পথে পথে হয়রানি

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের কবলে পড়ে গভীর রাতেও ময়মনসিংহ বাইপাসে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের স্রোত বইছে। পথে পথে সীমাহীন ভোগান্তি আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে হয়রানির শিকার হয়ে ক্লান্ত শরীরে নিজ গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে নারী-পুরুষ ও শিশু থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দিবাগত রাত ১টায় ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে দেখে গেছে এমন দৃশ্য।
এসময় ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মোড়ে মোড়ে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিত। এর মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্যরা।

ঘরমুখো যাত্রীরা জানান, এবারের ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মানুষের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। ঢাকার মহাখালী ও গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ছেড়ে আসা বাসসহ অন্য যানবাহনের ময়মনসিংহ পৌঁছতে সময় লেগেছে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। এতে গলদঘর্ম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যাত্রীদের।
এসময় কথা হয় ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোস্তাকিমের সঙ্গে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নে। ঈদে বাড়ি যেতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ৫শ টাকা ভাড়ায় দুপুর ২টায় রওনা হন ময়মনসিংহের উদ্দেশে। কিন্তু ময়মনসিংহ বাইপাস আসতে পেরেছেন রাত ১টায়। এতে তার সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন
মোস্তাকিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চৌরাস্তা থেকে বাস রওনা করার পর মাওনা, হোতাপাড়া, স্কয়ার মাস্টারবাড়ি ও আমতলী এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা। বাকি ৩ ঘণ্টা লেগেছে আমতলী থেকে ময়মনসিংহ বাইপাস আসতে।

এসময় তার সঙ্গে থাকা গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকার একটি শোরুমের কর্মচারী মো. শাহরিয়া আহমেদ বলেন, কীভাবে এসেছি বলে বোঝাতে পারব না। এমন ঈদযাত্রা যেন আর না হয়। পাঁচশ টাকা ভাড়ায় অর্ধেক রাস্তা আসছি। আরও তিনশ করে লাগবে হালুয়াঘাট যেতে। বাস না পেয়ে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে করে মানুষ ময়মনসিংহ আসছেন বলেও জানান তিনি।
এই দুই যাত্রী জানান, রাস্তায় প্রচুর লোক। গাড়িগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া। কোনো তদারকি নেই। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, বেশির ভাগ গার্মেন্টস আজ (বৃহস্পতিবার) ছুটি হয়েছে। তাই অনেক মানুষ আজ বাড়ি ফিরছে।
শেরপুর সদর উপজেলার গাজীর খামার এলাকার বাসিন্দা বেদেনা আক্তার বলেন, দুপুর ২টা ৫ মিনিটে মহাখালী থেকে বাস ছেড়েছে। জনপ্রতি ৭শ টাকা ভাড়া চুক্তি করে শেরপুরের বাসে উঠেছি। কিন্তু রাত ১টায় আমাদের এখানে (ময়মনসিংহ বাইপাসে) নামিয়ে দিয়েছে কন্টাক্টর। অতিরিক্ত ভাড়া তারা ফেরত দেয়নি। এখন শেরপুর যেতে আরও পাঁচশ টাকা করে লাগবে।
এই গার্মেন্টস কর্মী আরও বলেন, আমি তেজগাঁও এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করি। আজ আমার মতো বেশিরভাগ গার্মেন্টস কর্মীর ছুটি হয়েছে। সবাই বেতন পেয়েছে আগেই। তবে কাজের চাপ থাকায় আজ সবার ছুটি হয়েছে।
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান ঢাকার আশুলিয়ায় গার্মেন্টস চাকরি করা হালুয়াঘাট দক্ষিণ মনিকুড়া এলাকার যুবক খাইরুল ইসলামসহ আরও অনেকেই।

এসময় তারাকান্দা থেকে নগরীর বাইপাস আসা মো. জসীম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি জানান, একই অবস্থা নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ এলাকার। যাত্রীর চাপে ব্রিজ থেকে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে শম্ভুগঞ্জ মোড় পর্যন্ত।
এদিকে পথে পথে ভোগান্তির পাশাপাশি রাতভর ময়মনসিংহ বাইপাস গ্যাস পাম্পের সামনে হিজড়াদের চাঁদাবাজি উৎপাতে ব্যাপক নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। এসময় টাকা না দিলে যাত্রীদের মানিব্যাগ টানাটানি করাও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
একই সময়ে বাস, ট্রাক, সিএনজি, মাহেন্দ্র ও পিকআপে চড়ে ভোগান্তির শিকার হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে। তবে বাইপাস এলাকায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে কোনো যানবাহনকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে যানজট সৃষ্টি করতে দেখা যায়নি। এসময় একের পর এক যাত্রীবাহী যান ছুটতে দেখা গেছে শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলের সড়কগুলোতে।
নগরীর বাইসপাস এলাকায় আলোর স্বল্পতায় আলো আবছা অন্ধকার ছিল দৃশ্যমান। সড়কের বেশির ভাগ লাইটগুলো জ্বলছে না।
আলোর স্বল্পতার কথা জানিয়ে বাইপাসে কর্মরত ধোবাউড়া থানার পুলিশ সদস্য মো. টিপু সুলতান বলেন, সড়কের বেশিরভাগ লাইট নষ্ট। ঈদযাত্রায় লাইটগুলো জ্বললে ভালো হতো।

সেখানে কর্মরত সেনা সদস্যরা জানান, ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭০ জন্য সদস্য ও কর্মকর্তা নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে কাজ করছে। অনেক স্থানে যানবাহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা নজরদারিতে দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি বলেও জানান একাধিক পুলিশ সদস্য ও ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
অন্যদিকে, সড়কের নিরাপত্তায় এপিবিএন ও র্যাব সদস্যদের যানজট এড়াতে টহল দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাইপাসে অবস্থান করা ময়মনসিংহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহরোয়ার্দী সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বিরক্তির সুরে বলেন, পথে পথে ভোগান্তি থাকুক আমার কি। এখানে (বাইপাস) তো কোনো যানজট নেই। কোনো গাড়ি সড়কে থামাও নেই।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কতজন পুলিশ সদস্য সড়কে কাজ করছেন জানতে চাইলে বলেন, জানা নেই, হিসাব করে বলতে হবে।
আমান উল্লাহ আকন্দ/এসএসএইচ