গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়

পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ ময়দানে শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত। ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান। ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হবে এ ময়দান।
জানা গেছে, দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা ও পৌর প্রশাসন। ঈদগাহ মাঠ নামাজের উপযোগী এবং দৃষ্টিনন্দন করতে রংসহ বিভিন্ন কাজের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য ওজু, যানবাহন রাখার ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম, খাবার পানিসহ ৮০টি মাইক রাখা হয়েছে। পুরো ঈদগাহজুড়ে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ঈদের দিন সকাল থেকে মুসল্লিরা মাঠের প্রবেশপথ দিয়ে আসবেন। প্রত্যেক প্রবেশ পথের গেটে মেটাল ডিটেক্টর স্ক্যান করে শুধুমাত্র জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করবেন মুসল্লিরা। ৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে।
দিনাজপুর পৌরসভা পরিদর্শক নঈম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ এক মাস ৫৫ জন শ্রমিক দিনরাত কাজ করে মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। মুসল্লিদের জন্য লাইন, মাইক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।
দিনাজপুর পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরো ঈদগাহ মাঠজুড়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। ঈদের দিন সকাল থেকে মুসল্লিরা মাঠে স্থাপিত প্রবেশপথ দিয়ে ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করবেন। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর স্থাপন করা হয়েছে। মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করতে পারবেন। ঈদগাহ মাঠ এলাকায় তিনটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন করতে অসংখ্য মাইক বসানো হচ্ছে। লাখ লাখ মুসল্লির ওজুর জন্য পর্যাপ্ত ওযুখানা এবং পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোর-এ শহীদ ঈদগাহের প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শন করা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জন্য ঈদগাহ মাঠ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এটি দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা এখানে আসেন ঈদের নামাজ আদায় করতে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসন ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। ৩৫০ জন পুলিশ সদস্য, সাদা পোশাকে ডিবি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদে যাতায়াত ও নামাজ আদায় নিশ্চিত করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গোর-এ শহিদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোনো মিম্বার ছিল না। ২০১৭ সালে ৫২টি গম্বুজ নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ।
এছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। সিরামিক্স দিয়ে পুরো মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং করা। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে বৃহৎ পরিসরে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর