‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় হবে এই অঞ্চলের সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়’

নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাছানাত আলী বলেছেন, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছেন। আমি কথা দিচ্ছি যদি নির্বাচনটা দ্রুত হয়ে যায় এবং রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসে। তাহলে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় হবে এই অঞ্চলের সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। আমার তো সাহস এখন বেড়ে গেল, বগুড়ার ভিসি নওগাঁর মানুষ। উনিও নওগাঁর পক্ষে কথা বলবেন। আর নওগাঁর ভিসি বগুড়ার মানুষ। আমি দাঁড়িয়ে বগুড়ার পক্ষে কথা বলব। আমি আশাবাদী আগামী দিনে বগুড়া এবং নওগাঁ সমানতালে স্বাধীনতার পরে যেভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে, তিলে তিলে দূরে সরে দেওয়া হয়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে।
সোমবার (৯ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নওগাঁ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা, অদম্য মেধাবৃত্তি প্রদান ও ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৪৩তম বিসিএস এর নবীন কর্মকর্তাবৃন্দ ও ২৪ সালে যোগদানকৃত সরকারি -বেসরকারি চাকরিজীবীদের এবং ২২-২৩ ও ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্বে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ড. হাছানাত আলী বলেন, নওগাঁর যে সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে আমি তাদের পেছনে তিন মাস দৌড়িয়েছি। গাড়ি ছিল না, অটোতে করে গিয়েছি, মেট্রোতে চড়েছি নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসরুমে থাকবে বলে এ আশায়। আজকে যে সকল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে আমার খুব ভালো লাগতো তারা যদি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতো। আমি রিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছি। আমার এক সহকর্মী আমাকে বলেছেন আপনি রিকশায় করে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন? আমি তাকে বলেছি আমার এক শিক্ষক বলতেন, বিড়াল সাদা না কালো সেটি কোন বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে কিনা। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। উনি নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। আমি গাড়ি নিয়ে যাব, না রিকশায় যাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছাতে পারলাম কিনা? আমি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। উনি শিক্ষা সচিবের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়ে বলেছেন নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত চালু করা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমি একটি সেকেন্ড আমার পরিবারের জন্য ব্যয় করার আগে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা। এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। ঈদের একদিন আগে আমার সন্তানরা আমাকে বলে তোমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা সন্তানরা না। আমার স্ত্রী বলে তোমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি লিস্টে আমরা নেই, তোমার বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাদেরকে সময় দিতে না পারায় তারা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু সেদিন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা সঠিকভাবে পালন করছি এবং আমি তা ইবাদত হিসেবে নিয়েছি এর থেকে সৌভাগ্যের তো আর কিছু হতে পারে না। যেটার সার্টিফিকেট দিয়েছেন আমার স্ত্রী আমার সন্তানেরা।
ড. হাছানাত আলী আরও বলেন, নওগাঁবাসীর কাছে আমি অনুরোধ জানাবো আপনারা আমার পাশে এসে দাঁড়ান। আমি একা পারছি না, আপনারা দয়া করে একটু ইউজিসিতে গিয়ে বলুন। এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদেরই। আমি সেই সময় উপদেষ্টা নাহিদ সাহেবের কাছে গিয়েছি নওগাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে। নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জন্য। অনেকেই ভাবছেন ভিসি ঘুমাচ্ছে। ভিসি ঘুমায় না। আমার গাড়ির মধ্যেই সংসার, গাড়ির মধ্যেই খাওয়া দাওয়া, এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ছুটি। খুশির সংবাদ হলো নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমি ইউজিসির কাছে ৫০ বছরের একটি মাস্টার প্ল্যান দিয়েছিলাম। প্রজেক্টটি অনুমোদিত হয়েছে। আশা করি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে টেন্ডারে যাবে এবং খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।
নওগাঁ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও যন্ত্র প্রোকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কুদরত ই জাহান, নওগাঁ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. ইসরাফিল রতন, নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার, পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা'র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু এবং নওগাঁ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আজম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
মনিরুল ইসলাম শামীম/এমএএস