চিলমারীতে কিশোরকে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রেমের অপরাধে সজীব (১৭) নামে এক কিশোরকে ঘরে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মুখে গামছা গুজে দিয়ে তার দু’হাতে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে চেতনানাশক ইন্জেকশন দেওয়া হয়। এরপর তাকে সাইকেলের চেন এবং লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়কভাবে পেটানো হয়েছে। এতেই থেমে থাকেনি মারধরকারীরা, কিশোর সজীবকে নারকীয়ভাবে কষ্ট দিতে গিয়ে তার হাত ও পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতার নীচে এবং পুরুষ লিঙ্গে বারংবার সুঁচ ফুটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ১৫ জুন সজীবের পরিবারের পক্ষ থেকে চিলমারী থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৫/৬ জনসহ লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
সজীবের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, চিলমারী উপজেলা সদর ইউনিয়নের চর শাকাহাতি ঢুষমারা এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সজীবের সাথে পার্শ্ববর্তী বোলমন্দিয়ার খাতা চরের সাইফুল ইসলামের মেয়ের (১৪) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা মেনে নিতে না পেরে মেয়েটির বাবা সাইফুল ইসলাম যোগসাজস করে গত ৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেয়ের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমিক সজীবকে বাড়ির কাছে আসতে বলে। প্রেমিক সজীব মেয়েটির সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে নিয়ে বের হওয়ার সময় সাইফুল ইসলামসহ তার ১২/১৩ জন সঙ্গীয় লোক তাকে আটক করে। এরপর তার হাত ও চোখ বেঁধে পার্শ্ববর্তী চর গয়নার পটল এলাকায় একটি নির্জন ঘরে আটকে রেখে মুখে গামছা গুজে দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করে। ৯ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন করে মৃত ভেবে ফেলে যায়। পরে মুমুর্ষু অবস্থায় সজীবকে তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় সজীবের বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে গত ১৫ জুন চিলমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ থেকে প্রথমে বিভিন্ন নির্যাতনের ডকুমেন্ট চাওয়া হলে সেগুলোও নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু বর্বরোচিত এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রেকর্ড না করে উল্টো কোর্টে মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৬নং অভিযুক্তকারী রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছেলে-মেয়েকে আটক করে সালিস বৈঠক বসে। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে মাতব্বররা তাদেরকে শাসন করেন। মারপিটের বিষয়ে মেয়ের পরিবারের লোকজন জড়িত বলে তিনি স্বীকার করেন।
মামলার বিষয়ে চিলমারী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম জানান, মামলা নথিভুক্ত করতে হলে এসপি মহোদ্বয়ের অনুমোদন লাগে। এসপি মহোদ্বয় এই মামলার বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি এজন্য মামলাটা নেওয়া হয়নি।
মমিনুল ইসলাম বাবু/এমএএস