ফরিদপুরে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি 'জিয়া মঞ্চের' সভাপতি

ফরিদপুর সদরের কানাইপুরের আলোচিত ওবায়দুর হত্যা মামলার প্রধান আসামি খায়রুজ্জামান ওরফে খাজাকে জিয়া মঞ্চের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ওবায়দুর হত্যা নয় তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সভায় সংগঠনটির সদর উপজেলার আংশিক কমিটির সভাপতি হিসেবে খায়রুজ্জামান খাজার নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত আংশিক কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইয়াসিন আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাওন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. চুন্নু বেপারী ও সদস্য মো. মনিরুজ্জামান।
এ-সময় জিয়া মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম টি আখতার টুটুল, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস সাজ্জাদ আহমেদ, জেলা জিয়া মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবি এম মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী উপস্থিত ছিলেন। নবগঠিত কমিটিকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জিয়া মঞ্চ ফরিদপুর জেলা শাখায় কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটি লক্ষ্মীপুর গ্রামের হানিফ মাতবরের ছেলে খায়রুজ্জামান।
জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় খায়রুজ্জামান। ২০২১ সালের ১৫ মে দুইজন সহযোগীসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এক প্রেসব্রিফিংয়ে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানান, খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে কানাইপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, দস্যুতা, ভূমি দখলসহ নানা বিষয়ে ১৮টি মামলা রয়েছে। ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল ইয়াবাসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। একই বছরে ২৮ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রসহ খায়রুজ্জামান ও তার ৪ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর নেতা আব্দুর রহমানের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হিসেবে প্রকাশ্যে আসেন খায়রুজ্জামান। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা সমাবেশে ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জানান দিতেন খায়রুজ্জামান।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি নির্মমভাবে খুন হন কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছোট ছেলে ওবায়দুর রহমান খান। ওবায়দুরকে তুলে নিয়ে দুই চোখে লোহার পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয়, হাত পায়ের রগ কেটে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। এ ঘটনার পরে ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে খায়রুজ্জামানকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মা রেখা বেগম। এ মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন তিনি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ওবায়দুর হত্যার মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তদন্তধীন রয়েছে। সম্প্রতি খায়রুজ্জামান উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
জেলা জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী দাবি করে বলেন, খায়রুজ্জামানের পরিবারটি বিএনপির পরিবার। তিনি কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে খায়রুজ্জামানকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছিল। আমরা তার প্রতিটি মামলার খুটিনাটি বিষয় অনুসন্ধান করে বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করেছি।
অভিযোগ বিষয়ে খায়রুজ্জামানের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোন ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে আবার ফোন করা হলে অপর একজন ব্যাক্তি ফোনটি ধরে ‘রঙ নম্বর’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
খায়রুজ্জামানের ভাই কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ বলেন, তার (খায়রুজ্জামান) ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি উত্তর দিতে পারবো না। তার সাথে আমার ওঠাবসা নেই। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইছি না।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী বলেন, জিয়া মঞ্চ নামে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন নেই। এ বিষয়টি নিয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই।
জহির হোসেন/এমএএস