১৫ টন বালু সরিয়েও মিলল না নিখোঁজ শিশুটি

নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পুকুর ভরাটের সময় এক শিশু বালুর নিচে চাপা পড়েছে- এমন আশঙ্কা থেকে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার (৮ জুন) ভরাট করা জায়গা থেকে প্রায় ১৫ টন বালু সরানো হয়েছে। তারপরও খোঁজ মেলেনি হারিয়ে যাওয়া শিশুর। পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা তীরবর্তী পেঁচাকোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এখন পুলিশ ধারণা করছে, নিখোঁজ শিশুটি বালুর নিচে চাপা পড়েনি!
সোমবার (৭ জুন) সকালে বেড়া উপজেলার নতুন পেঁচাকোলা গ্রামে আসাদুল্লাহ নামে ৬ বছরের ওই শিশু নিখোঁজ হয়। সে পেঁচাকোলা গ্রামের মো. আযম আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী পেঁচাকোলা গ্রামের একটি পুকুর ভরাটের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে বালু ফেলার কাজ চলছিল। ভরাটের জন্য যমুনা নদী থেকে এক্সাভেটরের (খননযন্ত্র) মাধ্যমে বাল্কহেডে বালু তুলে তীরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেই বাল্কহেড থেকে পাইপের মাধ্যমে পানিসহ বালু পুকুরে ফেলা হচ্ছিল। পাইপের মাধ্যমে যে স্থানে বালু ফেলা হচ্ছিল, সেই স্থানটি বালু মেশানো পানিতে ভরে থাকলেও সেটি বেশ গভীর এবং সেখানে পা দিলে যে কেউ ডুবে যেতে পারে।
এদিকে সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে শিশু আসাদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করছিলেন। একপর্যায়ে আসাদুল্লাহর খেলার সঙ্গী সোহাগ (৬) নামের আরেকটি শিশু জানায়, সকাল ৯টার দিকে আসাদুল্লাহ ও সে পাইপের মাধ্যমে বালু পড়া দেখছিল। পরে সোহাগ বাড়ি চলে গেলেও আসাদুল্লাহ ঘটনাস্থলেই বসে থাকে। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, শিশুটি দুর্ঘটনাবশত পানি মেশানো বালুর মধ্যে পড়ে ডুবে গেছে।
এরপর স্বজনেরা বালু পড়ার ওই স্থানে শিশুটিকে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। তারা ব্যর্থ হওয়ার পর বেড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ১৫ টন বালু সরিয়েও শিশুটির খোঁজ পাননি। দুই দিন ধরে বালু সরানোর পর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, যমুনা নদী থেকে বালু তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর আগে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বালু তোলা প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ার সুযোগে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজর এর নেতৃত্বে একটি চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। এতে নদীভাঙন ও পরিবেশের বিপর্যয়ের পাশাপাশি প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে।
বেড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল দুপুর থেকেই শিশুটিকে খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। উদ্ধারকাজে যত রকম কৌশল প্রয়োগ করা দরকার থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আমরা তা করছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ছেলেটি এখানে নেই। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় নৌকায় মাইক নিয়ে নদীতে ছেলেটিকে খোঁজা হচ্ছে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান করা হয়। অনেক সময় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে তারা বালু তোলে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
নিখোঁজ শিশুর পিতা মো. আযম আলী বলেন, আমার ছেলেকে উদ্ধার না করেই অভিযান শেষ করা অমানবিক, দুঃখজনক। তিনি উদ্ধার অভিযান চালু রাখার অনুরোধ করেন।
রাকিব হাসনাত/এনএ/জেএস