নির্দেশনার পরও শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণে ব্যর্থ ঝিকরগাছা প্রশাসন

নির্দেশনা পেয়েও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশের শতবর্ষী মৃত গাছ এবং হেলে পড়া একটি ডালও অপসারণ করতে পারেনি ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও ডাল ভেঙে পড়ছে।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন নাভারণ কলোনি এলাকায় একটি মৃত গাছ মহাসড়কের ওপর উপড়ে পড়ে। এর কিছুদিন আগে বেনেয়ালি এলাকায় একটি মরা ডাল সড়কের উপর ভেঙে পড়ে। সম্প্রতি ঝিকরগাছা উপ-কর কমিশনার অফিসের সামনে একটি মোটা ডাল ভেঙে পড়ে। তবে এসব ঘটনায় ওই স্থানে কোনো যানবাহন ও পথচারী না থাকায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
এদিকে মহাসড়কের শার্শা অংশে প্রায় ৮০ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডাল অপসারণ করেছেন ইউএনও কাজী নাজিব হাসান। গত ২৯ এপ্রিল মহাসড়ক থেকে এ সব গাছ অপসারণে চিঠি দেয় যশোর জেলা পরিষদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক যশোর রোডে (যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক) কালের সাক্ষী হয়ে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো এখন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিবেশবন্ধু গাছগুলো কালের পরিক্রমায় এখন মহাশত্রু। কারণ গাছগুলোর বেশিরভাগই এখন মৃত বা অর্ধমৃত। সরকারি হিসেবে ৬৯৭টি বুড়ো গাছ এখনো টিকে আছে। কিন্তু এগুলোর ৬০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ছোটবড় ঝড়ে এ পর্যন্ত ১৭টি গাছ উপড়ে রাস্তার পাশে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। এর মধ্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ঝিকরগাছা অংশের গাছগুলো।
নাভারণ এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেলে যশোরে অফিস করেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এক প্রকার মৃত্যুকে হাতে নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। একটু বাতাস হলেই কখন জানি গাছ অথবা ডাল মাথায় ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে বুকের ভেতর ধুক ধুক করে।
নসিমনচালক রবিউল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে নসিমনে মালামাল নিয়ে ফিরছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে গাড়ির পেছনে মোটা একটি ডাল ভেঙে পড়ে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পাই।
ঝিকরগাছা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই সঙ্গে নির্দেশনা পেয়ে শার্শা উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করেছে। তবে এখনও একটি ডালও অপসারণ করেনি ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন। আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে ঝিকরগাছা প্রশাসনের গাফিলতি আছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্দেশনার চিঠি পেয়েই আমরা কাজ শুরু করি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আমরা এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডাল অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভুপালী সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে মৃত গাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল এখনও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের এ অংশে যতো ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে সেগুলোর দাম, নির্ধারণে আমরা বনবিভাগকে চিঠি দিয়েছি। চিঠির জবাব পেলেই অপসারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল মহাসড়ক থেকে এ সব গাছ অপসারণ করতে চিঠি দেয় যশোর জেলা পরিষদ। যশোর সদর, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া চিঠিতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতার কথা বলা হয়। ঝড়-বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এ সড়কটিতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সর্বশেষ বিষয়টি জেলা পরিষদের দৃষ্টিতে আনেন নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান। এর আগে ঝিকরগাছা, শার্শা ও যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকেও গাছ অপসারণে আবেদন করা হয়।
জেলা পরিষদের চিঠিতে বলা হয়, যশোর সড়ক বিভাগাধীন যশোর-বেনাপোল (এন-৭০৬) একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। উল্লেখিত জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু শতবর্ষী মরা গাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা রয়েছে। প্রায় সময় শতবর্ষী গাছের ডালপালা ভেঙে পথচারী নিহত/আহত ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের ফলে যে কোনো সময় মরা গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা পরিষদকে এসব গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনেক বার বলা হলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। বর্তমানে জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে উক্ত মরা গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা কর্তন ও অপসারণ করে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্ত্বরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
আরকে