রাজবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা

রাজবাড়ীতে চলতি বছর পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। পাট কাটা ও জাগ দেওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাটের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের দাবি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় জেলায় এবছর পাটের আবাদ কিছুটা বেড়েছে। গত বছর পাট আবাদ হয়েছিল ৪৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৭ হাজার ২৭৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮০০ হেক্টর বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পাটের ফলন সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত সন্তোষজনক এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে। তবে কিছু নিম্নাঞ্চলের জমিতে বৃষ্টির পানি দীর্ঘসময় জমে থাকায় পাটের আকার প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়নি। যা সীমিত পরিসরে পাটের ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবে এ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। যা কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এরই মধ্যে নিচু জমি থেকে পাট কাটা শুরু হয়েছে।
চাষিদের দাবি, পাটের ন্যায্য দাম নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকদের মজুরির মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার কারণে তাদের লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। তারা সরকারের কাছে ন্যায্য দাম নির্ধারণ এবং বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের পাকালিয়া গ্রামের পাট চাষি বিধান কুমার বলেন, বৃষ্টির কারণে নিচু জমির পাট পড়ে গেছে। যে কারণে কেটে জাগ দিতে কৃষিশ্রমিক বেশি লাগছে। খরচও বেশি পড়ে যাচ্ছে। এক বিঘা জমির পাট কাটতে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক লাগছে।
সদর উপজেলার পশ্চিম মুলঘর গ্রামের পাট চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, একেকজন কৃষি শ্রমিকের মজুরি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক মণ পাট উৎপাদন করতে আমাদের খরচ হয়ে যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা বাজারে পাটের দাম পাই না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এ বছর এক মণ পাটের দাম ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হোক।
আরেক কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, বীজ সার, ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম বৃদ্ধি। শ্রমিকের মূল্য বেশি। আমাদের দাবি, পাটের দাম যেন ভালো দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, এ বছর পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে এবার খাল-বিল-জলাশয়ে পানি থাকায় বাড়তি টাকা খরচ করে সেচ পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে না। তাই এবার পাটে কৃষকরা ভালো লাভ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে