১১ শহীদ নারীর বীরত্বগাথা হারিয়ে যেতে দেব না: উপদেষ্টা শারমিন

সমাজ কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশীদ বলেছেন, আমার দুটি স্পষ্ট ও গভীর আগ্রহের জায়গা রয়েছে। প্রথমত, আমাদের নারী শহীদ যোদ্ধারা, যারা জাতির জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের পূর্ণ অধিকার যেন রাষ্ট্র নিশ্চিন্তভাবে নিশ্চিত করে, সেটি দেখা। দ্বিতীয়ত, আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা যেটুকু শক্তি, রিসোর্স ও সুযোগ-সুবিধা আছে, তা কাজে লাগিয়ে শহীদ নারীদের পরিবার বিশেষত সন্তানদের পাশে থেকে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
রোববার (৬ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকার শহীদ রিয়া গোপের ও দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি এলাকার শহীদ সুমাইয়ার বাড়িতে তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।
সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা সুমাইয়ার পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, এই শহীদ মেয়েটির পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তার তিনটি ছোট ভাই আছে, মা তাদের দেখাশোনা করছেন। একটি বোনও রয়েছে।
তিনি শহীদ সুমাইয়ার মেয়ে সোয়াইবার উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের অন্তত এটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত যে, এই শিশুদের শিক্ষার পথ যেন বন্ধ না হয়। তাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য আমরা যেন একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।
জুলাই আন্দোলনের শহীদ নারীদের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমার পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট চাহিদা রয়েছে- আমরা ১১ জন শহীদ নারীর ওপর একটি গবেষণামূলক সংকলন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করব। আমাদের মেয়েরা হারিয়ে যাবে না—এই কথাটি বারবার বলেছি, কারণ তাদের বীরত্বগাথা আছে, কিন্তু সেসব গল্প আমাদের সামনে আসে না। আমি মনে করি, সেই ইতিহাস রক্ষা করা ও তুলে ধরা আমার দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, শহীদ পরিবারের ভাতাকে কেন্দ্র করে নানা জটিলতা দেখা যায়, সেসব বিষয় আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। শহীদদের সন্তান এবং তাদের অভিভাবক যিনি শিশুটির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তাদের যেন সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করছি এবং প্রশাসনও ন্যায্যতার সঙ্গে সেই কাজ করছে।
এর আগে রিয়া গোপের বাসায় সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, আমরা পুরো মাসটিকে ডেডিকেট করেছি এই জুলাই আন্দোলনের ওপর। যারা চলে গেছে, তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে এটা বলা আমরা তোমাদের ভুলিনি এবং ভুলব না। তোমরা যে আত্মত্যাগ করে গেলে, যে ক্ষতি তোমাদের হয়েছে, সেটার জন্য রাষ্ট্র সর্বোচ্চটা করবে। এ দেশের মানুষও তাদের স্মরণে রাখবে। এটা যেন আমাদের মননে থাকে, বয়ানে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ছোট্ট রিয়ার নামে একটি স্টেডিয়াম হয়েছে। সেখানে যখন বাচ্চারা খেলতে যাবে, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ রিয়ার নামটা থাকবে। তারা যখনই দেখবে, তখনই জিজ্ঞেস করবে—এই নাম কেন দেওয়া হলো? তখনই রিয়ার গল্পটা সবাই জানবে।
উপদেষ্টা বলেন, স্টেডিয়ামে সুন্দর একটা কর্নার থাকবে। সেখানে আমাদের যে বাচ্চারা হারিয়ে গেছে, তাদের নামসহ একটি কর্নার থাকবে। আজ রিয়ার মায়ের কাছে আসতে পেরেছি। সব শহীদের বাড়িতে যাওয়া কঠিন। তবে এই ১১টি মেয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের এবং ১৩৫টি শিশু যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারের চোখের জল মুছে দিতে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
মেহেদী হাসান সৈকত/আরকে