অগ্নিকাণ্ডে নিঃশেষ গোটা পরিবার, একে একে চলে গেল ৫ জন

জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর যুবক রিপন (৩৫)। ছোট ভ্যান চালিয়ে টেনেটুনে চলছিল সংসার। স্বপ্ন ছিল সন্তানদের মানুষ করার, পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা তার সেই স্বপ্ন ও সংসারকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। এক সপ্তাহে আগুনে দগ্ধ হয়ে একে একে মারা গেলেন স্ত্রী, তিন সন্তান আর শেষে রিপনও।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের যুগিরহাওলা গ্রামের বাসিন্দা রিপন প্রায় সাত বছর আগে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিন বছর আগে স্ত্রী চাঁদনী বেগম (৩০), দুই ছেলে তামিম (১৬) ও রোকনকে (১৩) সঙ্গে নিয়ে যান ঢাকায়। দেড় বছর আগে তাদের ঘরে আসে ছোট্ট ফুটফুটে কন্যা আয়েশা। রাজধানীর সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় একটি বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকতেন তারা।
আরও পড়ুন
রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজিটোলা এলাকায় গ্যাস লিকেজ থেকে ঘটা বিস্ফোরণে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হন পরিবারের সবাই। আহত অবস্থায় সবাইকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
১৪ জুলাই মারা যায় দেড় বছরের আয়েশা। দুইদিন পর চলে যায় তামিম (১৬) ও রোকন (১৩)। তাদের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান মা চাঁদনী (৩০)। ওইদিন দুপুরে ছেলেদের যুগিরহাওলা গ্রামের বাড়িতে, আর চাঁদনীকে তার বাবার বাড়ি সামুদাবাদ গ্রামে দাফন করা হয়। রাতে হাসপাতাল থেকে খবর আসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন রিপনও! ১২ জুলাই বিকেলে জানাজা শেষে তাকে তার দুই ছেলের পাশে সমাহিত করা হয়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে একে একে মারা যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছেন রিপনের বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম। একমাত্র ছেলের পাঠানো টাকাতেই চলত তার জীবনযাপন। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও বুকের হাহাকার যেন থামছে না।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, এক পরিবারের পাঁচজন সদস্যের এমন করুণ মৃত্যুর খবর শুনে আমরা সবাই শোকাহত। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা উপজেলা প্রশাসন তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা চেষ্টা করব।
রায়হান/আরকে