কালভার্ট হলেও নেই সংযোগ সড়ক, টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার
বরিশালের মুলাদী উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ একতারহাট সড়কে কালভার্ট হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে এলাকাবাসীর উপকারে আসছে না কালভার্টটি।
বিপরীতে দ্বিগুণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চরকালেখান ইউনিয়নের একতারহাট এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ। অথচ বরাদ্দের পুরো টাকা তুলে নিয়ে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব অ্যান্ড সন্স।
একতারহাট বাজারের ব্যবসায়ী গফুর খান বলেন, যখন কালভার্ট ছিল না তখন মানুষ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করতো। অনেক ভোগান্তি হত। ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে গিয়ে সাঁকোর নিচে পড়ত। এখন কালভার্ট হওয়ার পর পানিতে পড়ছে না কেউ। কিন্তু কালভার্টে উঠতে গিয়ে পা পিছলে আহত হচ্ছেন অনেকে। গবাদিপশু নিয়ে যাতায়াত করা যায় না। আগের থেকে এখন দুর্ভোগ বেড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সংযোগ সড়ক ভরাট ও কালভার্ট নির্মাণে ৭৮ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৭ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ইজারায় কাজ পায় ঝালকাঠির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব অ্যান্ড সন্স।
প্রকল্প সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার পর সেটি হিজলার এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয়। স্থানীয় উপঠিকাদার কাজ শেষ করেন ২০১৯ সালের শেষ দিকে।
জানা গেছে, কাজ শেষ হওয়ায় মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব অ্যান্ড সন্সের মালিক ঝালকাঠির শাহিন খান বরাদ্দের অনুকূলে কালভার্টটি নির্মাণ শেষ করে এলজিইডিকে কাজ বুঝিয়ে দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডির কর্মকর্তারা পরিদর্শন ছাড়াই তাদের কাজ বুঝে নেয়। কাজও হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। এ নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিল তুলে নিয়ে যান ঠিকাদার।
বর্তমানে কালভার্টের দুই পাশে মাটি ভরাট না দেওয়ায় উপকারের চেয়ে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কালভার্ট। স্থানীয়রা এ নিয়ে একাধিকবার ওয়ার্ড মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। শেষে স্থানীয়দের উদ্যোগে কিছু মাটি ফেলে কালভার্টে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রকল্পের উপঠিকাদার নাহিদ হোসেন দিদার তালুকদার বলেন, আমাকে যতটুকু কাজ করতে বলা হয়েছে তা আমি শেষ করেছি। আমি তো জানতাম না আসলে কি কি কাজ করতে হবে। যে টাকা পেয়েছি তাতে কালভার্ট করতেই কষ্ট হয়েছে। সংযোগ সড়কে মাটিভরাট দেওয়ার জন্য বরাদ্দ না থাকায় দিতে পারিনি।
এ বিষয়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব অ্যান্ড সন্সের শাহীন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্প সম্পর্কে কথা বলতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন হাবিবের সহযোগী আনোয়ার হোসেন।
কাজের অনিয়মের বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভ্রা দাস বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে। কাজে অনিয়ম হলে অবশ্যই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজ শেষ হওয়ার আগে কিভাবে বিল উত্তোলন হলো সেটিও খতিয়ে দেখব।
এদিকে উপজেলায় এলজিইডির দায়িত্বে থাকা তৎকালীন কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ায় কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এলজিইডির ওই কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলা যায়নি।
এএম